পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ ভবনেই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

0

শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি

পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় সদর দপ্তর লালমনিরহাটে অর্ধশতাধিক পরিবার পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ ভবনে জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে বাসবাস কছেন।

ভবনগুলো ব্রিটিশ সরকারের আমলে নির্মিত হলেও এগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। জরাজীর্ণ ভবনগুলো যেকোনো সময় ধসে পড়ে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া বসবাস না করা অধিকাংশ ভবনই এখন মাদকের অভয়ার‌ণ্য হয়ে ওঠেছে। কিন্তু রেলকর্তৃপক্ষ েএব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

রেলওয়ে অফিস সূত্র জানায়, ব্রিটিশ শাসনামলে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের কথা বিবেচনা করে ৫১টি কোয়াটার নির্মিত হয় লালমনিরহাট শহরে। এ সময় রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নির্মিত হয় বাসভবনগুলো। সেই বাসভবনগুলো দীর্ঘদিনেও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষের এমন উদাসিনতার ফলে সবাসের অনুপযোগী ভবনগুলোতেই বসবাস করছেন লালমনিরহাট রেল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

৫১টি কোয়াটারের মধ্যে বর্তমানে ১৩টিতে বসবাস  করছেন তারা। । আর বাকি ৩৮টি কোয়াটারে বাস করছে রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের আত্মীয়-স্বজন ও বহিরাগতরা। কিন্তু অধিকাংশ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সেখানেই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল ও আগাছা রয়েছে। এছাড়াও ভবনগুলো দাগি আসামি ও মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবনগুলোতে বসবাসরত অনেকেই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দখলে নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষকে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে আয় করছে টাকা। আবার রেলওয়ের সামান্য বেতনে বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত কর্মচারীরা রয়েছে এসব ভবনে। ব্রিটিশ আমলের জরাজীর্ণ ভবনগুলোর একাধিক স্থানে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ফাটল। খসে পড়েছে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অবকাঠামো, বের হয়ে গেছে লোহার রড। এসব ভবনে বেড়ে ওঠা পরগাছাগুলো দেয়াল ভেদ করে অথবা দেয়াল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। দেয়াল, সিঁড়ি, ছাদ সব স্থাপনাই এখন ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

শহরের বাবু পাড়া, সাহেব পাড়া ও ড্রাইভার পাড়া এলাকায় অধিকাংশ ভবনের ছাদে ফাটল, কোনো কোনো ভবনের ইট ইতোমধ্যে খুলে গেছে।

এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনগুলোতে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাদের আত্মীয়-স্বজন ও বহিরাগতরা।

অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মচারী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘১৯৬৫ সাল থেকে রেলওয়েতে চাকরি করেছি। সেই সময় থেকেই ভবনগুলো দেখে আসছি। ভবনগুলো রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য ইংরেজরা নির্মাণ করেন। কিন্তু দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ভবনগুলো সংস্কার না করায় এখন বসবাসের মারাত্মকভাবে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আজ থেকে ২৫ বছর আগে রেলওয়ের পক্ষ থেকে মাইকিং করে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে বসাবাসকারীদের। তারপরও সেখানে বাস করলে কী আর করার আছে।

বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, ভবনগুলো পুনরায় মেরামত করার জন্য বরাদ্দ চেয়ে বিভিন্ন সময় আবেদন করা হয়েছে। তবে বরাদ্দ না পাওয়ায় সংস্কার করা যাচ্ছে না।

 

মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.