দেখা মেলেনা গরুর গাড়ীর

0

শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি

‘ও কি গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে..’ এখন আর চাইয়া থাকলেও গরুর গাড়ী চোখে পড়ে না। সময়ের বিবর্তনে আজ গরুর গাড়ী চালক (গাড়ীয়াল) না থাকায়, হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা গাড়িয়াল ভাইয়ের কণ্ঠে সেই অমৃত মধুর সুরের গান। গাড়ী চালানোর সময় আনন্দে গাড়ীয়ালরা গাইতেন এই গান।

এক সময় চিরায়ত গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে বয়ে চলতো গরুর গাড়ী। যা একসময় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে প্রচলিত ছিল এবং গ্রাম বাংলায় গরুর গাড়ীই যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল। সেই গরুর গাড়ী এখন আর চোখে পড়ে না। গানও গায়না গাড়ীয়ালরা।

এক সময় জনপদে এই বাহনের সরগরম অস্তিত্ব ছিল, সর্বত্র কদরও ছিল গরুর গাড়ীর। মাত্র দুই যুগ আগেও পণ্য পরিবহন ছাড়াও বিবাহের বর-কনে বহনে বিকল্প কোন বাহন কল্পনাই করা যেত না।

যেসব পরিবারে গরুর গাড়ী ছিল, তাদের কদরের সীমা ছিল না। কৃষকরা প্রতিদিন ফজরের আজানের আগে গরুর গাড়ীতে কখনো জৈবসার (গোবর সার) কখনো গরুর খাবার ও লাঙ্গল-মই- জোয়াল নিয়ে মাঠে যেত।

সুপ্রাচীনকাল থেকে দেশের গ্রামীণ জনপদে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেতেরে গরুর গাড়ির বহুল প্রচলন পরিলক্ষিত হতো।

পায়ে চলার পথে মানুষ পশুর শ্রমে চলিত গরুর গাড়ী যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ও বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনে প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহার করত প্রাচীনকাল থেকেই। এখন আর তাকিয়ে থাকলেও গরুর গাড়ীও চোখে পড়ে না।

আধুনিকতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ী। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গাড়ীয়াল পেশাও। যা একদা ছিল বংশ পরম্পরায়। সময় অতিবাহিত হবার সাথে সাথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারকবাহক অনেক বাহনেরই আম‚ল পরিবর্তন, আধুনিকায়ন সাধিত হয়েছে।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের চেয়ার ম্যান নুর ইসলাম এবং কাকিনার সন্তান উপজেলার ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব তাহির তাহু বলেন, আমরা নিজেদের ব্যাবহারের জন্য যেমন প্রাইভেটকার বা মটরসাইকেল ক্রয় করে থাকি, ঠিক তেমনি আগে গ্রামের লোকজন গরুর গাড়ী তৈরী করে বাড়ীতে রাখতেন। আপদ-বিপদে তা তারা বাহন হিসেবে ব্যবহার করতেন।

গরুর গাড়ী এখন শুধুই স্মৃতি। গরুর গাড়ী এখন থেকে স্মৃতির জাদুঘরে রূপান্তরিত হচ্ছে। আমরা চাই জাদুঘরে খুব যত্ন ও গুরুত্বের সাথে এটি সংরক্ষণ করা হোক। কারণ আধুনিকায়নের কাছে এটি এখন মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। আগামী প্রজন্মের জন্য এগুলো ইতিহাস হয়ে থাকবে।

মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.