ঢাকার বুকে এক খন্ড সিংড়া
ফাত্তাহ তানভীর মোঃ ফয়সাল,
রাজধানীর আগারগাঁও আইসিটি মিলনায়তনে ঢুকতেই চোখে পড়লো একসাথে অনেকগুলো পরিচিত মুখ। কেউ কেউ কুশলাদি বিনিময় করতে ব্যস্ত, আবার কেউবা মঞ্চসজ্জা নিয়ে। চোখে পড়লো রাজনীতিক মঞ্জুরুল আলম হাসু, মাহমুদ হাসান (ডাঃ মোবারক হোসেনের তনয়), অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোঃ হাফিজুর রহমান, রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রলয় কুমার, ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মতিনসহ আরো অনেককেই। এছাড়া হাজির হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। অনুষ্ঠানে সবাই এসেছেন উৎসবের আমেজ নিয়ে। এখানে এসে সবাই মেতেছেন নস্টালজিয়ায়। বড় একটি ব্যনারে মঞ্চে লেখা রয়েছে ‘‘সিংড়া উৎসব-২০১৮’’। ডানে-বামে যেখানেই দৃষ্টি যায় শুধু সিংড়ার মানুষ দেখি। এ যেন সিংড়ার হাট!!!
হঠাৎ করে অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক হাজির হলেন অনুষ্ঠানের মধ্যমণি মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি। তার আগমনের অনুষ্ঠান যেন প্রাণ ফিরে পেল। সিংড়া উৎসবের সঞ্চালক ও সিংড়া উপজেলা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নয়নের আহ্বানে প্রধান অতিথি মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি এবং সভাপতি অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ আগত অন্যান্য অতিথিদের সাঙ্গে নিয়ে মঞ্চে উপবিষ্ট হলেন।
এরপরে বক্তব্য রাখলেন- প্রকৌশলী মোঃ আনিসুর রহমান, অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক ড. মোঃ মখলেসুর রহমান বাবর, অধ্যাপক ড. মোঃ মোরশেদুর রহমান, প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ। আরো বক্তব্য রাখলেন- সিংড়া থেকে আগত ইউনিয়ন কাউন্সিল এর চেয়ারম্যানবৃন্দ ও জেলা পরিষদের সদস্যবৃন্দ। সিংড়া উপজেলা কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখলেন- সমিতির সহ-সভাপতি এনায়েত করিম রাঙা, সহ-সভাপতি ও প্রতিমন্ত্রী পত্নী আরিফা জেসমিন কনিকা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মো: নূর নবী পাটোয়ারী প্রমুখ। এরই এক ফাঁকে সিংড়া উপজেলা কল্যাণ সমিতির কমিটির সদস্যবৃন্দদের শপথ বাক্য পাঠ করান সমিতির উপদেষ্টা ও নির্বাচন কমিশনার মোঃ আবুল হোসেন
প্রধান অতিথি মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি তাঁর বক্তব্যে সিংড়া উপজেলাকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসাবে দেখতে চান বলে ঘোষণা করেন। এ ছাড়া তিনি সিংড়া উপজেলাকে বাংলাদেশের একটি মডেল উপজেলা হিসাবে গড়ে তুলবেন বলে আশ্বাস দেন। অন্যান্য বক্তারা সিংড়ার প্রতি গভীর ভাবাবেগ প্রকাশ করেন, যা উপস্থিত সবাইকে আবেগী করে তোলে।
এরপর একে একে চলতে থাকে কৃতি শিক্ষার্থিদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, ‘‘সফল যারা কেমন তারা’’ সফলদের সম্মাননা ক্রেস্ট, ‘‘সফল যারা কেমন তারা’’ সফল নারীদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান। সর্বমোট ১৪ জন শিক্ষার্থিকে শিক্ষাবৃত্তি ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়, ‘‘সফল যারা কেমন তারা’’ হিসাবে ৬ জন নারীকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাকিয়া সুলতানা, ঢাবির গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. শাপলা শিরিন, ডাঃ নাদিরা পারভীন রুনা, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এফ.সি.পি.এস, (AMC, FRACGP), ডুয়েটের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরিন আক্তার, ঢাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মন্দিরা মুকুটমণি, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ লায়লা সালমা বানু, ।
‘‘সফল যারা কেমন তারা’’ পুরুষ হিসেবে যারা সম্মাননা পেয়েছেন- ব্যবসায়ী খন্দকার আবুল কাশেম, ঢাকা ওয়াসার সচিব এসএম রেজাউল মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি এজেএম নাফ্উিল ইসলাম, বিএসএমএমইউ এর সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আইযুব আল মামুন, আমিনুল ইসলাম কুহেল ব্যবসায়ী, মোঃ আব্দুল হালিম ব্যবসায়ী, জাকির হোসেন দুলাল ব্যবসায়ী, লিয়াকত আর মামুন ব্যবসায়ী, গোলজার হোসেন ব্যবসায়ী, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ গোলাম সবুর।
খেতে গিয়ে দেখা হ’ল মাইলস্টোন কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আউয়াল কবির এর সাথে। তিনি বলেন, ‘‘ শিক্ষার্থিদের শিক্ষাবৃত্তি, নারীদের সম্মাননা, সফলদের সম্মাননা ক্রেস্ট এই উৎসবকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। বড় ভাল লেগেছে এই মিলনমেলা। ’’
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে শাকলিা আখতার (ছাত্রী, কম্পউিটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জনিয়ারিং বভিাগ, জাহাঙ্গীরনগর বশ্বিবদ্যিালয়) বলেন, ‘‘সিংড়া উপজেলা কল্যাণ সমিতি ঢাকা কর্তৃক আয়োজতি অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করতে পেরে আমি গর্বিত আমাকে কৃতি শিক্ষার্থী মনোনীত করায় আমি সকল আয়োজকদের ধন্যবাদ ও আন্তরকি কৃতজ্ঞতা জানাই। এরকম অনুষ্ঠান হলে আমাদের ভবষ্যিৎ প্রজন্মের বন্ধন আরো অটুট এবং দৃঢ় হবে।’’
সফল নারী হিসাবে সম্মাননা প্রাপ্ত ডাঃ নাদিরা পারভীন রুনা অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত তাঁর জয়িতা মা নার্গিস সুলতানা বলেন, ‘‘ এই ভাবনাটি সুন্দর ছিল, সাধুবাদ জানাই। সিংড়া উপজেলা বেশ বড়; তাই আমার মনে হয়, এই ধরণের সফল মানুষ অনেক রয়েছে। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। অনেকেই হয়ত বাদ পড়েছেন, সম্মাননা পাননি অথচ তাঁরা যোগ্য।’’
গ্রীনরুমে ঢুকতেই মনে হলো একজন খুব পরিচিত মুখ, যাকে অনেকবার দেখেছি। তিনি হলেন লালনকন্যা কুষ্টিয়ার ফরিদা পারভিন। তাঁর আদি নিবাস (পৈতৃক বাড়ী) সিংড়া উপজেলা কলম ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামে। তিনি একে একে গাইলেন এই পদ্মা এই মেঘনা……, তোমরা ভুলেই গেছ মলি-কা’দির নাম, নিন্দার কাঁটা যদি না বিধে গায়, এ ছাড়াও লালনের অনেক গান। দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধের মত উপভোগ করলেন তাঁর গান। আর ফরিদা পারভিনও নিজের অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে তৃপ্ত হলেন।
‘সিংড়া উৎসব ২০১৮’ এর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং সিংড়া উপজেলা কল্যাণ সমিতির অর্থ সম্পাদক তানভীর রানা বলেন, ‘‘এ বছর আমরা প্রচুর সাড়া পেয়েছি। আজীবন সদস্য ৬৮ থেকে প্রায় দুই শত জন পর্যন্ত পেয়েছি। ৩৫০ জন ধারণ ক্ষমতার হল রুম তাতে ৫০০ দর্শক এলেও অনুষ্ঠান সুন্দর হয়েছে। শুধু ঢাকাস্থ সিংড়াবাসীই নয় বরং সিংড়া থেকে অনেক সাধারণ মানুষ এসেছেন ঢাকাস্থ সিংড়াবাসীদের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করার জন্য। এতে করে আমাদের কর্মস্পৃহা ও ভালবাসা বেড়েছে দ্বিগুণ।’’
স্যার যদুনাথ সরকার, চারু মজুমদার, মাদার বখশ, খাদেমুল বাশার, ডাঃ শেখ মোঃ মোবারক হোসেন এর স্মৃতি ঘেরা সিংড়া উপজেলা। আরো অনেক গুণী মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল সিংড়া। কিছু গুণী মানুষ এখনও আছেন। তাদের মধ্যে অনেকের সাথেই দেখা হয়েছে, আবার অনেকেই ছিলেন অনুপস্থিত। বহুমুখী কাজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সিংড়া উপজেলা কল্যাণ সমিতি। সমিতির প্রচেষ্টা ১৯৯৭ সাল থেকে। সিংড়া উপজেলা কল্যাণ সমিতি ধাবমান হোক সত্য ও সুন্দরের পথে। পথ চলা হোক পঙ্কিলতার বিপরীতে। আসুন এক সাথে একই শ্লোগানে গাই সম্প্রীতির গান। ঢাকাস্থ সিংড়া উপজেলাবাসী ভাল থাকবেন। ফ্রিল্যান্স রাইটার
মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল