গুরুদাসপুরে শিশু খাদিজাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার

0

বিনা অপরাধে ছয়জনের হাজতবাস

 

গুরুদাসপুর (নাটোর) সংবাদদাতা

দশ মাস পর গ্রেফতার করা হয়েছে শিশু খাদিজার (৭) হত্যাকারী ও লাশগুমে সহায়তাকারীদের। ৩০ সেপ্টেম্বর রোববার সন্ধ্যায় গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর ইউনিয়নের বিলশা গ্রাম থেকে তাদের গ্রেফতার করেন থানার উপপরিদর্শক নূরেআলম সিদ্দিকি।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নিহত শিশু খাদিজার আপন চাচাতো ভাই শাকিব (১৫), শাকিবের মা সোনালী বেগম ও চাচা মোর্শেদ আলী। রোববার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদিকে খাদিজা হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার অভিযুক্ত প্রতিবেশি নাজমা, নাইম, নাজমুল, বাদল, শহিদুলসহ ছয়জন বিনা অপরাধে দশ মাস ধরে হাজতবাস করছেন।


গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সেলিম রেজা গতকাল মঙ্গলবার থানায় প্রেসবিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন- শিশু খাদিজাকে ধর্ষণের পর গলাটিপে হত্যার কথা শিকার করেছে তারই আপন চাচাতো ভাই শাকিব। গতবছর ২০ ডিসেম্বর দুপুরে শাকিবের ঘরে টেলিভিশন দেখতে গেলে শাকিব গামছা দিয়ে খাদিজার মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে। তখন বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার ভয়ে খাদিজাকে সে নিজেই গলা টিপে হত্যা করে। নিহত শিশু খাদিজার পিতা মনিরুল ইসলাম, চাচা মোর্শেদ ও হত্যাকারী শাকিবের পিতা মিলন সম্পর্কে আপন চার ভাই। তাদের বাড়ি গুরুদাসপুরের বিলশা গ্রামের ভক্তিপাড়ায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নরেআলম সিদ্দিকী জানান- ২০ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে নিখোঁজ হয় শিশু খাদিজা (৭)। দুই দিন খোঁজাখুঁজির পর পুলিশ শিশুটির সন্ধাণ পায়নি। অবশেষে ২২ ডিসেম্বর শুক্রবার সকালে শাকিবদের বাড়ির পিছনের একটি দিঘি থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

এঘটনায় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ওই দিনই প্রতিবেশি বাদল ভক্তি (৪২) ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৮), বাদলের ভাতিজা নজরুল ইসলামকে (৩৫) আটক করে পুলিশ। পরে নিহত শিশুর পিতা মরিুল ইসলাম বাদী হয়ে আটককৃতসহ তাদের ছয় জনের বিরুদ্ধে গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অন্য অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে হাজতে পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের তথ্যে মামলার রহস্য উদঘাটন হয়নি। একারনে পুলিশ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে খাদিজার চাচাতো ভাই শাকিব, চাচা মুর্শেদ, চাচি সোনালীর আঙ্গুলের ছাপ, ডিএনএসহ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরিক্ষা করে। তবে সেসব প্রতিবেদন এখনো আসেনি।

সর্বশেষ হত্যার দশ মাস পর ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে ওসি সেলিম রেজার নিদের্শে এসআই নূরেআলম পুলিশ নিয়ে শাকিবের বাড়ি থেকে তাদের তিনজনকে গ্রেফতার করে। পরে থানায় শাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে শাবিক জানায়, খাদিজাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাটি তার মা সোনালী বেগমকে জানালে তিনি স্বামী মিলন ও ভাসুর মোর্শেদকে জানান। এরপর মোর্শেদের পরিকল্পনায় খাদিজার প্রাণহীন দেহটি বস্তায় ভরে খাটের নিচে রাখা হয়। সুযোগবুঝে ২২ ডিসেম্বর রাত ২ টার দিকে তারা চারজন বস্তাবন্দি লাশটি পাশের দিখিতে ফেলে দেন। ওই দিন সকালে তাদের পরিবার থেকে পুকুরে লাশ পাওয়ার খবরটি পুলিশকে জানানো হয়। এবং প্রতিবেশিদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করে মনিরুল ইসলাম। তবে ভাতিজির লাশ গুমের পরিকল্পনাকারী মোর্শেদিই নিখোঁজের দিন থানায় জিডি করেছিলেন। তদন্তে বেড়িয়েছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

নিহত শিশুর পিতা মনিরুল ইসলাম জানালেন- দশ মাস আগে তার কন্যাশিশু খাদিজা খুন হয়েছে। তাও আপন ভাতিজা তার মেয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে বিষয়টি খুব স্পর্শকাতর। এখন তো আর মেয়েকে ফিরে পাবেন না তিনি। তবুও প্রকৃত হত্যাকারী গ্রেফতার হয়েছে সেই শান্তনা বুকে চেপেই শিশু সোহা ও ছেলে রিফাকে আকরে ধরে বেঁচে থাকতে চান তিনি।

ওসি সেলিম রেজা জানান- খাদিজা হত্যা মামলায় প্রথম অভিযুক্তদের অনেকেই এখানো হাযতে রয়েছেন। অথচ তারা নির্দোশ। খাদিজার চাচা মোর্শেদের পরিকল্পনাতেই তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাদের মুক্তির জন্য আদালতে সুপারিশ করা হবে।

মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.