খুন-গুমের নাটক সাজিয়েছেন মরিয়ম নিজেই
মুক্ত অনলাইন ডেস্ক
মরিয়মের ঘরে ছোপছোপ রক্ত। পায়ের নূপুর। দুই টুকরো মাংস, রক্তমাখা দুটি ছুরি মেজেতে পড়ে ছিল। কেবল মরিয়ই ছিলেন না। সবার ধারনা স্কুল ছাত্রী মরিয়মকে বোধহয় হত্যাই করা হয়েছে। এই রহস্যের ঘোর কিছুতেই কাটছিলনা।
মহিপুর হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম ১৮ সেপ্টেম্বর রাতের খাবার খেয়ে মায়ের পাশে ঘুমিয়ে ছিল। সকালে মা নুরজাহান বেগম মেয়েকে পাননি। মেঝেতে ছিল বিভিন্ন আলামত। ভেবেই নিয়েছিলেন মেয়েটিকে কেউ খুন করেছে। মেয়ের বেঁচে থাকা নিখোঁজ হওয়ার এই দোলাচালে পুলিশও রীতিমতো রহস্য উদঘাটন করতে পারছিলনা।
সব হতাশার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নবম শ্রেণির স্কুলছাত্রী মরিয়মকে ১৭ দিন পরে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। খুন ও লাশ গুমের চাঞ্চল্যকর ঘটনার অবসান ঘটিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। শনিবার দুপুরে পটুয়াখালী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।
পুলিশ সুপার মইনুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার মুগদা থানার মদিনা বাগের খালপাড় রোডস্থ রুনা ফ্যাশন গার্মেন্টেসে কর্মরত অবস্থায় ৫ অক্টোবর রাতে কথিত লাশ গুমের পরিকল্পনাকারী ও আত্মগোপনকারী মরিয়মকে উদ্ধার করা হয়েছে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে পরিবার এক খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে জোর করে বিয়ের আয়োজন করলে পালিয়ে যান মরিয়ম। এরপর নিজেকে হত্যাকাণ্ডের নাটক সাজান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার রাতে বাড়ির একটি সাদা রংয়ের রাজাহাঁস জবাই করে তার বুকের দুই টুকরো মাংস ও রক্ত ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখেন মরিয়ম। পায়ের নূপুর ও অন্যান্য আলামত ঘরের মেজেতে রেখেই ঢাকায় পালিয়ে যান তিনি। ১৯ সেপ্টেম্বর ভোররাতে এসব পরিকল্পনা সবার অজান্তে সম্পাদন করেন।
এরপর সকালে কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজ সংলগ্ন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আলীপুরে হয়ে বাসযোগে প্রথমে কলাপাড়ায় যান। সকাল ৮টার দিকে কলাপাড়া থেকে ঢাকাগামী ঈগল পরিবহনে ঢাকায় গিয়ে নিজেই গার্মেন্টন্সে কাজ খুঁজে নেন।
মরিয়মকে আদালতে সোপর্দ করার কথা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, মরিয়ম এতই ধূর্ত যে, কারও সহায়তা ছাড়াই এই চাঞ্চল্যকর এবং দুঃসাহসিক পরিকল্পনা একাই সম্পন্ন করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিপুর হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম ১৮ সেপ্টেম্বর রাতের খাবার খেয়ে মায়ের পাশে ঘুমায়। সকালে তার মা নুরজাহান বেগম মেয়েকে না দেখে খুঁজতে বের হতেই ঘরের মেজেতে বিভিন্ন আলামত দেখতে পান। ঘরে ছোপছোপ রক্ত, পায়ের নূপুর, দুই টুকরো মাংস, রক্তমাখা দুটি ছুরি মেজেতে।
এতে সবাই ধারণা করছিল, মরিয়মকে খুনের পর তার লাশ গুম করা হয়েছে। এ ঘটনার পরদিন তার মা বাদী হয়ে মহিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ। এর সর্বশেষ কিনারা হয় মরিয়মকে উদ্ধারের মাধ্যমে।
মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল