ধানে ধরাশায়ী কৃষক
বরাবরই ধানের ফলন ভালো। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া বিগত ছয় বছরের একই চিত্র। হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর জমিতে সোনার ধান দেখে কৃষকের হাঁসির ঝিলিক যেন অফুরন্ত। সেই হাঁসিই আবার মুহূর্তেই ম্লান হয়ে যায়। কৃষকের স্বস্তির জয়গাজুড়ে বিরাজ করে ন্যয্য মূল্যে পাওয়া না পাওয়ার একটা ঘোর দোলাচাল।
এ বছরের চলতি রবি মওসুমে গুরুদাসপুর উপজেলাজুড়ে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বৃ-ধান ২৯, জিড়াশাইল, ২৮, ৫৮ ধান চাষ করা হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৫০০ মেট্টিকটন। ধারাবাহিকভাবে ধানের এতো ভাল হলেও কৃষকের চোখে মুখে হতাশার ছাপ থেকেই যায়।
কৃষি অফিস বলছে,- গুরুদাসপুর উপজেলার কৃষি জমিগুলোতে বছরজুড়েই ধানের আবাদ হয়। ২০১১ সালের তিনটি মওসুমের খরিপ-১ মওসুমে রোপা আমন, বোনা আউশ, বোনা আমনের চাষ করা হয়েছিল ৮২৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ১৮৬৬ মেট্টিকটন। ২০১২ সালে ৭০৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন হয় ১৬৩৩ মেট্টিকটন। ২০১৩ সালে ১০১০ হেক্টর ধান চাষ করে ২৪৯০ মেট্টকটন। ১৪ সালে ৯০৫ হেক্টরে ২৬৫৫, ১৫ সালে ১০০৫ হেক্টরে ২৯৯৪ মেট্টিকটন এবং ১৬ সালে ১০৪৫ হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ৩২৪৩ মেট্টিটন।
২০১১ সালের খরিপ-২ মওসুমে রোপা আমনের চাষ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ২৪ হাজার ২৭৩ মেট্টিকটন। ২০১২ সালে ১১ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন হয় ২২ হাজার ৪৯৩ মেট্টিকটন। ২০১৩ সালে ১১ হাজার ৫১০ হেক্টর ধান চাষ করে ২৩ হাজার ৪৪৫ মেট্টকটন। ১৪ সালে ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টরে ২৫ হাজার ৬১৭, ১৫ সালে ১১ হাজার ৫৮২ হেক্টরে ২৬ হাজার ৪৫৬ মেট্টিকটন এবং ১৬ সালে ১১ হাজার ৫০০ হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ২৬ হাজার ৪৯ মেট্টিটন।
২০১১ সালের খরিপ-৩ রবি মওসুমে বৃ-ধান ২৯, জিড়াশাইল, ২৮, ৫৮ চাষ করা হয়েছিল ৪ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ২০ হাজার ৪৮১ মেট্টিকটন। ২০১২ সালে ৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন হয় ২১ হাজার ২৯৪ মেট্টিকটন। ২০১৩ সালে ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর ধান চাষ করে ২০ হাজার ৪৪৪ মেট্টকটন। ১৪ সালে ৪ হাজার ২৫০ হেক্টরে ২০ হাজার ৪৮৭, ১৫ সালে ৩ হাজার ৯৯০ হেক্টরে ১৮ হাজার ৪৮ মেট্টিকটন এবং ১৬ সালে ৩ হাজার ৯৯০ হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ১৮ হাজার ৫৭২ মেট্টিটন।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, ১৭ সালে চলনবিলের নাটোর জেলায় বোরো ধানের চাষ করা হয়েছিল ৫৬ হাজার ৪শ ১৬ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে চলনবিল অংশের গুরুদাসপুর, সিংড়া ও সিরাজগঞ্জের অন্তত ৩০টি বিলের নিম্মাঞ্চল পিপলা, বিলশা, রুহাই, যোগেন্দ্রনগর, হরদোমার বেসানি, আনন্দনগর, বেড়াবাড়ি, কালিনগর, সারদানগর, বিনসারা, কাজিপুর, মালশিন, বস্তুল, বিনীতপুর বিলের ফসলি জমি পানিতে ডুবে যায়। সেসময় সব মিলিয়ে প্রায় ২হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। চলতি বছর এপ্রীল মাসের শেষের দিকে ও মে মাসের প্রথমের দিকে ভারি বর্ষন হয়। এতে গুরুদাসপুর উপজেলার নিম্মাঞ্চলের কিছু ধান ডুবে যায়। এতে তেমন ক্ষতি হয়নি। আশানুরুপ ফলন কৃষকরে ঘরে উঠার ধারনা করা হচ্ছে।
এ অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, এবছরও কিছু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। জমির অর্ধেক ধান শ্রমিকের মুজুরী হিসাবে দিয়ে ওই ধান কাটা হয়েছে। তাছাড়া ধানের বীজ বাবদ ২ হাজার, জমি চাষ বাবদ ১ হাজার ২শ, রোপন বাবদ ২ হাজার সার-কীটনাশক ২ হাজার, সেচ বাবদ ২ হাজার এবং ধান কাটা বাবদ শ্রমিকের মুজুরী ৪ হাজার। এছাড়া বর্গা লীজ নেওয়া জমিতে প্রতি বিঘায় আরো ১০ হাজার টাকা বেশি ব্যায় হয়েছে। এছাড়া বছর দশেক ধরে ধানের বাজার মূল্যে মন প্রতি ৬শ থেকে সর্বোচ্চ ৭শ টাকা। এতে অধিক খরচে ধান চাষ করা কৃষক ন্যায্য মূল্যে না পাওয়ায় ধারাবাহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
পারগুরুদাস গ্রামের কৃষক জানালেন,- হাইব্রীড জাতের ধানগুলোর ফলন বিঘায় ২৫ মণ হারে হয়েছে। এছাড়া জিরাশাইল, মিনিকেট ধান উৎপন্ন হয়েছে ২০ মণ হারে। বর্তমান বাজার মূল্যে অনুযায়ী হাইব্রীড জাতের ধান মণ প্রতি ৮শ থেকে ৯শ টাকা। এই বাজার অব্যাহত থাকলে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠবে। তবে লোকসান গুনতে হবে বর্গা (লীজ) নিয়ে আবাদ করা কৃষকের।
বিলশা গ্রামের ধান চাষী আব্দুল মমিন, সুখেন হোড়, আব্দুস সালামসহ অন্তত দশজন কৃষক জানান,- কৃষি উপকরনের দাম বাড়ায় প্রতি বছই ধানের আবাদ করতে অধিক খরচ হয়। তবে ফলন আশাতীত হয়। কিন্তু উঠতি সময়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা কম দামে ধান কিনে তা মজুদ করেন। আবার দাম বাড়লে বিক্রি করেন। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
গুরুদাসপুর কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন,- বিচ্ছিন্ন কিছু প্রকৃতিক সমস্যা ছারা ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন ন্যায্য দাম পেলেই কৃষক উপক্রিত হবে।