শালী-দুলাভাইয়ের রঙ্গরসের বলি গৃহবধু নাসরিন আক্তার

0

মুক্ত অনলাইন ডেস্ক

দুলাভাইয়ের সাথে প্রেম করেন শালীকা। সেই সূত্র ধরে প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটেছে। শালী-দুলাভাইয়ের সেই রঙ্গরসের বলি হয়েছেন গৃহবধু নাসরিন আক্তার রিভা। ঘটনাটি ঘটে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব হাটিল ইউনিয়নের পূর্ব হাটিলা গ্রামে। নিহতের আপন ছোট বোন আইরিন আক্তারকে নিয়ে স্বামী হযরত আলী খুন করেন স্ত্রীকে। এ ঘটনায় দুলাভাই-শালী দুজনকেই আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে চাঁদপুর জেলা পুলিশ কার্যালয়ে পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানান।

নিহত আইরিন সুলতানা রিভা হাটিলা গ্রামের ব্যাপারী বাড়ীর প্রবাসী আব্দুর রহিমের কন্যা। সে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাশ করে। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত স্বামী হযরত আলী চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের মনিহার গ্রামের রুহুল আমিন মাস্টারের ছেলে। সে দুবাইতে থাকতো। চলতি মাসের ৮ তারিখে দেশে আসে হযরত। অপর অভিযুক্ত নাসরিনের ছোট বোন আইরিন আক্তার রেখা (১৬) স্থানীয় টঙ্গিরপাড় হাটিলা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যায়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।

১৮ মার্চ নাসরিনের সঙ্গে হযরত আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে সে দুবাই চলে যায়। বিয়ের পরেই নাসরিনের ছোট বোন আইরিনের প্রতি চোখ যায় হযরত আলীর। বিদেশ থেকে নিয়মিত রেখার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। শেষ পর্যন্ত গোপনে বিদেশ থেকে এসে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় সে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৯ অক্টোবর ওই গ্রামের বেপারী বাড়িতে ছোট বোন আইরিন রাতের বেলায় পায়ে উড়না পেচিয়ে পা চেপে ধরে এবং হযরত আলী মুখে বালিশ চাপা দিয়ে নাসরিনকে হত্যার চেষ্টা করে। ওই সময় নাসরিন সজাগ হয়ে গেলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে হযরত আলী বালিশ ফেলে দিয়ে নাসরিনকে গলা চেপে ধরে এবং বুকে আঘাত করলে তার বুকের পাজর ভেঙে যায়। ওই অবস্থায় নাসরিন চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

নাসরিনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হযরত আলীকে অপর দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে ছোট বোন আইরিন। পরে বাড়ির লোকজনকে ভিতরের আরেকটি দরজা খুলে দিয়ে সেও অজ্ঞান হওয়ার ভান ধরে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর ওই বাড়ীর বাসিন্দা ফেরদৌসি আক্তার মিনুসহ লোকজন নাসরিন ও আইরিনকে প্রথমে হাজীগঞ্জ বিসমিল্লাহ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরবর্তীতে তাদেরকে কুমিল্লা সিটি প্যাথ হসপিটালে নিয়ে যান। ওই হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ অক্টোবর রাতে নাসরিনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় নিহতের পিতা আব্দুর রহিম ১৪ অক্টোবর হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহম্মদকে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় একই উপজেলার বাকিলা বাজার থেকে অভিযুক্ত হযরত আলীকে আটক করেন। তার কথানুযায়ী ঘটনার সাথে জড়িত নাসরিন আকতার রিভার ছোট বোন আইরিন আকতার রেখাকে বুধবার (১৭ অক্টেবর) তার বাড়ী থেকে পুলিশ আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে হযরত আলী পুলিশকে জানান, ঘটনার পূর্বে সে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল। ওই রাতে শালি আইরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই বাড়িতে আসে। এর পূর্বে থেকে আইরিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক এবং শারীরিক সম্পর্ক হয়। সে পুলিশকে উল্লেখিত হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেয়। পরে পুলিশ হযরত আলী ও আইরিন আক্তারকে চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করলে অভিযুক্ত হযরত আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। পরে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.