পাহাড়ের রোষানলে পরে আবারও এগারো জনের নিথর দেহ

0

বর্ষণ যেন থামছেই না। টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে মা-ছেলেসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বেশ কয়েকজন। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে আজ মঙ্গলবার ভোরের দিকে নানিয়ারচর উপজেলার মোট তিনটি স্থানে পাহাড় ধসে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কোয়ালিটি চাকমা বলেন, পাহাড় ধসে উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের ধর্মচরণ কার্বারিপাড়ায় একই পরিবারের চারজন, সাবেক্ষং ইউনিয়নের বড়পুল পাড়ায় চারজন ও ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের হাতিমারায় দু’জন নিহত হয়েছেন।

নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লা আল মামুন তালুকদার পাহাড় ধসের খবর নিশ্চিত করেছেন।

নিহতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছেন তারা হলেন- উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের ধর্মচরণ কার্বারিপাড়ার স্মৃতি চাকমা (২৩), তার ছেলে আয়ুব ওরফে অমর দেওয়ান (দেড় মাস), ইতি দেওয়ান (১৯), ফুলদেবী চাকমা (৫৫); সাবেক্ষং ইউনিয়নের বড়পুলপাড়ার সুরেন্দ্র লাল চাকমা (৫৫), তার স্ত্রী রাজ্য দেবী চাকমা (৫০), মেয়ে সোনালী চাকমা (১৩) ও রোমেন চাকমা (১৪)। হাতিমারায় রিপোল চাকমা (১৪), রীতা চাকমা (৮) এবং খিলাছড়িতে বৃষকেতু চাকমার (৬০)। স্থানীয়দের মতে, সোমবার রাত ১২টার দিকে বুড়িঘাট ইউনিয়নের ধরমপাশা কার্বারিপাড়ার একটি পরিবার মাটিচাপা পড়ে। এতে চারজনের মৃত্যু হয়। অন্য ঘটনাগুলো ভোরের দিকে ঘটে।

নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বলেন, উপজেলার তিনটি স্থানে পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে ঘটনাস্থলে। বৃষ্টির জন্য উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হচ্ছে।

রাঙামাটির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গতকাল সোমবার ভোর ছয়টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত জেলায় ২৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেছেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের স্বজনদের ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনের লোকজন দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এখনও যারা আছেন তাদের পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। প্রচুর ত্রাণ মজুদ আছে এবং প্রতিটি উপজেলায় ত্রাণ রয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও পাঠানো হবে। আমরা পরিস্থিতির সার্বিক খোঁজ রাখছি। তবে এখনো পর্যন্ত কতজন মারা গেছে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।’

এছাড়া তিনি আরও বলেন, নানিয়ার চরে তিনটি জায়গায় পাহাড় ধস হয়েছে। জেলা সদরসহ সব মিলিয়ে বিশটির মতো পাহাড় ধস হয়েছে গত রাত থেকে। জেলায় গত কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছিলো। এখনো একটানা বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে। বৃষ্টির যে অবস্থা, এভাবে যদি বৃষ্টি হতে থাকে তাতে আমরা আরো পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছি।’

এ ঘটনার পর থেকে উপজেলায় অধিকাংশ এলাকাই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

প্রবল বর্ষণের পর গত বছর ১৩ জুন থেকে রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ৪ সেনা সদস্যসহ অন্তত ১২০ জন নিহত হন।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.