বর্ষণে জলাবদ্ধতা নাকাল চট্টগ্রামবাসী
ভারি বর্ষণ জলাবদ্ধতা। এই দুইয়ে নাকাল হয়ে পড়েছেন চট্টগ্রাম মহানগরবাসী। বর্ষণে নালা-নর্দমা খাল উপচে প্লাবিত হয়েছে চলাচলকারী সড়কগুলো। আটকা পড়া পানি নিস্কাশন না হওয়ায় জলবদ্ধতায় বেড়েছে দূর্ভোগ।
স্বাভাবিক জীবন যাপন বিঘিœত হচ্ছে। কয়েকদিনের বর্ষণে ঈদ কেন্দ্রিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম ভেসে গেছে। নগরীর বেশিরভাগ সড়কের ওপর জমে থাকা কোমর পানিতে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ যানজট।
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম মহানগরী জলাবদ্ধতামুক্ত করতে নালা-খাল জলাশয় সংস্কার-নির্মাণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প শুরু হওয়ার কথা বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নেওয়া মেঘা প্রকল্পটি এখন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
তবে নগরীর বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির মেগা প্রকল্পটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হাতে নেওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এই দায় নিতে চাইছেনা।
চট্টগ্রামের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এবার জলাবদ্ধতাজনিত দুর্ভোগের দায় তার কাঁধে নেই বলে আভাস দিয়েছেন। এেিদক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি শুরু করতে পারেননি বলে নগরীর বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল- চট্টগ্রামে চলতি বছরের মে থেকে শুরু হওয়া মেগা প্রকল্পের কারণে জনগণ জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্ত থাকবেন।
নগরীতে এ বছরও জলাবদ্ধতা ও বর্ষণজনিত ক্ষতির শিকার অর্ধশত এলাকা। ফ্লাইওভার নির্মাণ, খাল ও নালা সংস্কারের কাজ সত্ত্বেও আরো নতুন নতুন এলাকা জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। এই সংকটের স্থায়ী শিকার এখন প্রবর্ত্তক মোড়। নতুন করে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আশপাশের এলাকা। নাসিরাবাদ সিডিএ এভিনিউ দুই নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকার ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক এবং পাশাপাশি জিইসি মোড় চৌমোহনীর জিইসি কনভেনশন সেন্টার সংলগ্ন এলাকা জলাবদ্ধতার এক ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। গত কয়েকদিনে ভারি বর্ষণ হচ্ছে রাতেই। পাহাড়ি ঢল ও খাল-নালা উপচে পড়া পানিতে নগরীর নিচু এলাকার অধিবাসীরা সীমাহীন কষ্টের শিকার হচ্ছেন। বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, চকবাজার, বহদ্দারহাট, খতিবেরহাট, হালিশহর, কাতালগঞ্জসহ নগরীর আরো অনেক নিচু এলাকায় বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি দোকানপাটেও ঢুকেছে পানি।
জলাবদ্ধ এলাকার বাসিন্দারা জানান,- অপরিকল্পিত নগরায়ন ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণে ৩০/৩৫ বছর আগে নির্মিত বহুতল ভবনসমূহের একতলাগুলোর ৮০ শতাংশ এখন বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বহদ্দারহাট থেকে ইস্পাহানি বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের মুরাদপুর থেকে ২ নম্বর গেট এবং নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় অংশ পর্যন্ত নিচের রাস্তায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় মাঝারি বৃষ্টিতেই পানি নিস্কাশন হচ্ছে না।
ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ক পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, তিনি গত দুইদিন জলাবদ্ধতার কারণে ঘরের বাইরে যেতে পারছেন না। তার বাসা আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিকের ১২ নম্বর সড়কে।
বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ এবং চট্টগ্রামস্থ সাদার্ন ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে। কাজেই এবারের বর্ষায় নগরবাসীর কোনো উপকার হবে না। আগামী বর্ষাতে হয়তো কিছু সুফল পাওয়া যেতে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে গত চব্বিশ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৯৪ দশমিক ২ মিলিমিটার। আগামী চব্বিশ ঘণ্টায়ও ভারি বর্ষণেরও পূর্বাভাস ও পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে। সমুদ্রে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা মঙ্গলবারও বহাল ছিল।