ধারাবাহিক গল্প : ইং বাং (পর্ব-৪)
এটা একেবারেই অসম্ভব রকমের কথা হয়ে গেল! কারণ এই কমিটির বিষয়ে আমরা ছাড়া আর কেউ জানে না। বললেন কমিটির নবীন সদস্য।
আহমদ আব্দুল্লাহ বলল, জানি আপনাদের কাছে অবিশ^াস্য মনে হতে পারে। আপনারা চাইলে আমার বাবার সাথে কি ধরণের কথা হয়েছে তার রেকর্ডিং শুনাতে পারি। তাছাড়া মুসা কালিমুল্লাহ মানে মাহিনের বাবার সাথে কি কথা হয়েছে তা তাঁর কাছ থেকেও জানতে পারি।
তোমার বাবাতো ড্যাঞ্জারাস মানুষ! ফোনের কথা কেউ রেকর্ডিং করে? বললেন মহিলা অভিভাবক। বলে তাকালেন আহমদ আব্দুল্লাহর দিকে।
আহমদ আব্দুল্লাহ বলল, দেখুন আমি ছোট মানুষ, আমার সাথে এভাবে কথা বললে আমি নির্ভয়ে কথা বলতে পারব না। আমার মনে হয় স্যার, আমাদের এই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে কমিটি করা প্রয়োজন। কারণ অনুসন্ধান করার আগেই পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়লে অনুসন্ধান বাধাগ্রস্থ হয়। তবে আমি কিছু ক্লু দিয়ে দেব আজকে। বলেই স্যারের দিকে তাকাল আহমদ আব্দুল্লাহ। তাকানোর পরে তার ভ্রু দুটি একটু কুঁচকে গেল। সে কথাটি বলতে বলতে প্রিন্সিপাল সাহেবের পিছনের জানালার পর্দার দিকে তাকিয়ে দেখল মনে হলো জানালার ওপার থেকে কেউ কথা শুনছে। মনে হলো হালকা জানালার পর্দা সরে গেল। সে মাথার উপর দিয়ে ঘারের পিছনে হাত দুটি নিয়ে চোখ বন্ধ করল। সে কি ভুল দেখছে? নাকি জানালার পর্দা বাতাসে নড়ে উঠেছে? মানুষ ছোট হলেও তার দেখা সাধারণত ভুল হয় না। ভাবছিল সে। তার চোখ বন্ধ করে ভাবা দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়েছিল। তবে কেউ কিছু বললেন না। প্রিন্সিপাল সাহেব এক মিনিট পরে আহমদ আব্দুল্লাহর দিকে তাকিয়ে বলল, আহমদ তুমি কি অসুস্থ ফিল করছ?
না, স্যার। আপনি কি আমাদের পিয়ন কাকাকে একটু ডেকে দিতে পারবেন? উনি এখন কোথায় আছেন? আর যাকে পাঠাবেন তাকে আমি কয়েকটি কথা বলব যদি আপনি অনুমতি দেন।
তুমি কি কিছু সন্দেহ করছ?
না স্যার। তাকে ডাকলে একটু সুবিধা হতো। বলল আহমদ আব্দুল্লাহ।
ঠিক আছে ডাকছি। তাকে নাস্তা আনার জন্য রফিকের দোকানে পাঠানো হয়েছে আধা ঘন্টা আগে। এতক্ষণে চলে আসার কথা।
একজনকে দিয়ে পিয়নকে ডাকার জন্য বলা হলে সে এক মিনিটের মধ্যে এসে বলল, স্যার সে দোকান থেকে অনেক আগেই এসেছে। দোকানে গিয়ে বলেছে খুব তাড়াতাড়ি কর, এই এই জিনিসগুলো বের করে দাও। আর স্যার আহমদের কথা অনুযায়ী আমি দুজন ছাত্রকে দিয়ে খোঁজ করতে বলেছি তারা কোথায়ও তাকে খুঁজে পায়নি।
নবীন সদস্য উঠে দাড়িয়ে বলল, স্যার আমরা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ আছি। পিয়ন কি করল এটা ভেবে কি সময় নষ্ট করা আমাদের ঠিক হবে? তার হয়তো অন্য কাজ থাকতে পারে। তাছাড়া আহমদ ঠিকই বলেছে স্যার, তদন্ত কাজ ছাত্রদের না দিয়ে আমাদের উপর ছেড়ে দেন। দেখেন এক সপ্তাহের মধ্যে বের করে ফেলব। আণুমানিক ধরে একটু পিটালেই সব স্বীকার করবে।
মিটিং এর মধ্যে কয়েকজন কমিটির নবীন সদস্যের কথা শুনে মাথাও ঝুকালো। আহমদ আব্দুল্লাহ মাথা ঝুকানো ব্যক্তিবর্গের দিকে খেয়াল করছিল খুব তীক্ষè দৃষ্টি নিয়ে। তার ধারণা যদি সত্য হয় তাহলে সে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তথ্য উদঘাটন করে ফেলবে। পিয়নের বিষয়টি সে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছেনা কোন ভাবেই! বাতাসে পর্দা নড়লে আবছা ছায়া থাকবে না। গাছের পাতার ছায়াও যদি পড়ে তবুও ছায়াটি অত বড় হবে না। আর যেহেতু এখন সকাল সুতরাং টয়লেটের ছাদের ছায়াও পড়ার কথা না। আর পড়লেও কয়েক সেকেন্ডের জন্য তা সরে যাবে না। আহমদ এতটাই আনমনা হয়ে পড়েছিল যে, পিয়নকে ডাকার লোকের কথা এবং কমিটির নবীন সদস্য দুজনের কথা শুনে সে চিন্তার সমুদ্রে ঝাপ দিল। বিষয়টি প্রিন্সিপাল সাহেবের নজর এড়ায়নি। নিশ্চয়ই আহমদ কিছু ভাবছে। কারণ আহমদ ট্যালেন্ট ছাত্র এবং আনকমন টাইপের। এজন্য তার উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রিন্সিপাল স্যারের ভাবনা শেষ না হতেই পিয়ন হন্ত-দন্ত হয়ে ছুটে এসে বলল, স্যার আমার পেটের খুব সমস্যা, স্যার। এর মধ্যে কয়েকবার টয়লেটে গেছি। স্যার, আমাকে ছুটি দেন, স্যার। আমি নাস্তা রেডি করতে দিয়েছি মহিলা আয়াকে।
প্রিন্সিপাল স্যার হাতের ঈশারায় অনুমতি দিলেন। তার মাথায় আহমদ আব্দুল্লাহর মতো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল! মনে হচ্ছে আহমদ আব্দুল্লাহ’রা ঠিক পথেই এগুচ্ছে! আহমদের কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার কথা বলার মধ্যে কোন রহস্য নেই তো? নবীন সদস্য কেন আহমদের কমিটি ভেঙ্গে দেয়াকে সায় দিচ্ছে?
চলবে ………………………