রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের পর্দা উঠছে আজ তাকিয়ে কোটি কোটি ভক্ত
মস্কো এখন বিশ্বকাপের শহর হিসাবে পরিচিতি পাচ্ছে। দেশটির অন্যতম প্রধান ভেন্যু মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়াম তৈরি বিশ্বকাপের কিক অফের বাঁশি বাজাতে। খেলা দেখার জন্য তৈরি হয়ে আছে কোটি কোটি দর্শক। সকলেই নিজেদের মতো করে তৈরি হচ্ছে বিশ্বকাপে অংশ নেয়া দেশগুলো। প্রতিক্ষার পালা শেষে মাঠের লড়াই শুরু হতে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে আজ লুঝনিকি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে স্বাগতিক রাশিয়া এবং ‘এ’ গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ সৌদি আরব। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় আর্জেন্টাইন রেফারি নেস্তর পিতানার মুখে কিক অফের বাঁশি বেজে উঠার সাথে সাথেই পর্দা উঠবে ফুটবলের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’র ২১তম আসরের। বিশ্বকাপের খেলাগুলো রাশিয়ার ১১ শহরের ১২টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। রাশিয়ার এই ১২টি ভেন্যুতেই ফুটবলযুদ্ধে নামবে বিশ্বের সেরা ৩২টি দেশ। শিরোপা লড়াইয়ে কে বিজয়ীর মুকুট মাথায় নিয়ে নাচবে তা জানা যাবে আগামী ১৫ জুলাইর ফাইনাল শেষে।
এই বিশ্বকাপের আয়োজন রাশিয়ার জন্য অন্য রকম চ্যালেঞ্জ।তবে দল হিসেবে নয়। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন, সম্ভাবনা নেই; কিন্তু আয়োজক হিসাবে তারা চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। এর আগে ১৬টি দেশের সৌভাগ্য হয়েছে বিশ্বকাপ আয়োজনের। আবার কোনো কোনো দেশ একাধিবার। প্রথমবার আয়োজক হয়ে অন্যদের ছাড়িয়ে যাওয়ার অদম্য বাসনা রয়েছে রাশিয়া সরকার প্রধান ভ্লাদিমির পুতিনের। গত বুধবার মস্কোয় অনুষ্ঠিত ফিফার কংগ্রেসে পুতিন সারা বিশ্বকে স্বাগত জানান তার দেশে বিশ্বকাপকে উপভোগ করার জন্য। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে উপস্থিত থাকবেন ২০টিরও অধিক দেশের রাষ্ট্রনেতা।
নতুন সাজে সজ্জিত লুঝনিকি স্টেডিয়াম। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি শুরু হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ব্রিটিশ রক মিউজিক তারকা রবি উইলিয়ামস । তার সঙ্গে থাকবেন রাশিয়ার জনপ্রিয় শিল্পী আইদা গারিফুলিনা। এই দুজনের পাশাপাশি মঞ্চে উঠবেন সপ্তম সুরের কিংবদন্তি স্প্যানিশ শিল্পী এবং অপেরা আইকন প্লাসিদো ডমিঙ্গো। শেষে মঞ্চে উঠবেন আরেক জনপ্রিয় শিল্পী জুয়ান ডিয়েগো ফ্লোরেজ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন দুইবারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনাল্ডোও। রবি উইলিয়ামস তার জনপ্রিয় গানের কয়েকটি গাইবেন। সারা বিশ্বের বিভিন্ন ঘরানার ক্লাসিক্যাল মিউজিককে প্রাধান্য দিবেন। স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ৮০ হাজার দর্শক মাঠ থেকে দেখার সুযোগ পাবেন। একই সময়ে শহরের বিখ্যাত রেড স্কয়ারে কনসার্ট হবে। অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০০ নৃত্যশিল্পী থাকবেন। তারা রাশিয়ান সংস্কৃতি তুলে ধরবেন। বাংলাদেশ তো আছেই সঙ্গে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকাসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বকাপ দেখানোর স্বত্ব কিনে নিয়েছে সনি পিকচার্স নেটওয়ার্ক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ বিশ্বকাপের ৬৪টি ম্যাচও দেখা যাবে সনি টেন টুতে।
আর্জেন্টিনার কারাগারে অনশন এবার বিশ্বকাপ দেখা নিয়ে!
বুয়েন্স আয়ার্সের ৮ শত মাইল দক্ষিণে পুয়ের্তো ম্যাড্রিন কারাগারের ৯ করাবন্দীর দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ক্যাবল টেলিভিশন দেখা স্বাধীনতা বঞ্চিত বন্দিদের জন্য অপরিহার্য অধিকার। গত ৩ দিন ধরে এটা একেবারেই কাজ করছে না এবং কর্তৃপক্ষও গা ছাড়া ভাব দেখাচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ কোনো প্রকার খাদ্য গ্রহণ করব না।’
খবর পাওয়া গেছে, কারাগার এলাকায় থাকা ক্যবল সিস্টেমটি সম্প্রতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তা সংস্কার করা হয়নি। এদিকে শুধু বিবৃতি আর অনশনই নয়, ওই ৯ বন্দি আর্জেন্টিনার আইন অনুসারে তাদের অধিকারের দাবিতে একটি মামলাও করেছে। এতেই টনক নড়েছে কারা কর্তৃপক্ষের। আগামী শনিবার মস্কোতে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে আর্জেন্টিনা। এর আগে আগামীকাল বৃহস্পতিবার স্বাগতিক রাশিয়া ও সৌদি আরবের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ২১তম ফিফা বিশ্বকাপ।
অক্টপাসের মতো এবারের বিশ্বকাপের আগাম ফলাফল জানাবে ‘জ্যোতিষী’ বিড়াল!
ফুটবলপ্রেমীদের অক্টোপাস ‘পল’ এর কথা কি ফুটবল প্রেমিদের নিশ্চই মনে আছে! ২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপের অনেকগুলো ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণী করছিল এই অক্টোপাস পল। এরপর ‘পল’ এর মতো সুনাম কেউই কুড়াতে পারেনি। ২০১৪ বিশ্বকাপে ‘হাতি’ দিয়ে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারনের চেষ্টা করেছিল ব্রাজিল। কিন্তু কোন কাজে ভবিষ্যদ্বাণীই সঠিক হয়নি সেই হাতির। এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে ম্যাচের ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করবে একটি বিড়াল। নাম ‘অ্যাকিলিস’।
২১তম বিশ্বকাপ আসরের আয়োজক রাশিয়া সরকারিভাবে জ্যোতিষী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে অ্যাকিলিসকে। একটি বহুতলের বেসমেন্টে থাকে বিড়ালটি। তার কাজ হলো ঐ বেসমেন্টের ইঁদুর শিকার করা। আয়োজকদের দাবি, অতীতে ক্লাব ফুটবল বা আন্তর্জাতিক অনেক খেলার বিষয়ে অ্যাকিলিসের ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হয়েছে। তাই সরকারিভাবে রাশিয়া বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর ভবিষ্যদ্বাণী করবে সে।
ভবিষ্যদ্বাণী করতে পলের মতোই প্রক্রিয়া অবলম্বন করবে অ্যাকিলিস।
গাণিতিক হিসাবে চ্যাম্পিয়ন হবে ব্রাজিল
কোন দল এবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, গোল্ডেন বুট উঠবে কার হাতে- ইত্যাদি পরিসংখ্যানের হিসাব চলছে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার ভক্ত বেশি। তবে গ্রেসনোট এর গাণিতিক হিসাবে যে চ্যাম্পিয়নের নাম উঠে এসেছে তাতে মেসিভক্তদের অখুশি হওয়ারই কথা।
গ্রেসনোট বিশ্বের অন্যতম তথ্য-উপাত্ত সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে চলা রাশিয়া বিশ্বকাপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন কারা হবে- সে বিষয়ে সম্প্রতি একটি গাণিতিক হিসাব করেছে তারা। প্রায় ১০ লাখ সম্ভাবনার হিসাব মিলিয়ে প্রাপ্ত তালিকায় সম্ভাব্য শিরোপাজয়ী হিসেবে নাম উঠে এসেছে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের। নেইমারদের পর এবারের বিশ্বকাপ জয়ের বেশি সম্ভাবনা স্পেনের। গতবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি আছে তৃতীয় স্থানে। আর্জেন্টিনা আছে চার নম্বরে।
বিশ্বকাপে নতুন কোনো দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ৪৭ শতাংশ।
বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশির রেকর্ড তুলে ধরা হলো :
চূড়ান্ত পর্বে সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি—ব্রাজিল (২১)।
সবচেয়ে বেশি শিরোপা জয়—ব্রাজিল (৫)।
সবচেয়ে বেশি ফাইনাল খেলা দল—জার্মানি (৮)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা দল—জার্মানি (১০৬)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা দল—ব্রাজিল (৭০)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারা দল—মেক্সিকো (২৫)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ড্র করা দল—ইতালি (২১)।
সবচেয়ে বেশি গোল করা দল—জার্মানি (২২১)।
সবচেয়ে বেশি গোল হজম করা দল—জার্মানি (১২১)।
সবচেয়ে বেশিবার খেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে না পারা দল—স্কটল্যান্ড (৮)।
সবচেয়ে বেশি টানা শিরোপা—২; ইতালি (১৯৩৪, ১৯৩৮), ব্রাজিল (১৯৫৮, ১৯৬২)।
সবচেয়ে বেশি টানা ফাইনাল—৩; (জার্মানি ১৯৮২-১৯৯০), ব্রাজিল (১৯৯৪-২০০২)।
সবচেয়ে বেশি টানা জয়—১১; ব্রাজিল।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচে টানা অপরাজিত—১৩; ব্রাজিল।
সবচেয়ে বেশিবার অংশগ্রহণ—৫ বার; আন্তোনিও কারবাজাল (মেক্সিকো, ১৯৫০-১৯৬৬), লোথার ম্যাথাউস (জার্মানি, ১৯৮২-১৯৯৮) ও জিয়ানলুইজি বুফন (ইতালি, ১৯৯৮-২০১৪)।
৩ বার বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র ফুটবলার—পেলে (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলার—লোথার ম্যাথাউস (জার্মানি, ২৫ ম্যাচ)।
সবচেয়ে বেশি সময় খেলা—২২১৭ মিনিট; পাওলো মালদিনি (ইতালি)।
সবচেয়ে বেশি ফাইনালে উপস্থিতি—৩ বার (কাফু, ব্রাজিল ১৯৯৪-২০০২)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা অধিনায়ক—ডিয়েগো ম্যারাডোনা (১৬ ম্যাচ)।
বদলি ফুটবলার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলার—ডেনিলসন (ব্রাজিল, ১১ ম্যাচ)।
দুবার বিশ্বকাপ জেতা কোচ—ভিত্তরিও পোজ্জো (ইতালি, ১৯৩৪ ও ১৯৩৮)।
কোচ হিসেবে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ—৬, কার্লোস আলবার্তো পাহেইরা (কুয়েত ১৯৮২, আরব আমিরাত ১৯৯০, ব্রাজিল ১৯৯৪ ও ২০০৬, সৌদি আরব ১৯৯৮, দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১০)।
বিশ্বকাপে পাঁচটি ভিন্ন দেশের কোচ—বোরা মিলুটিনোভিচ (মেক্সিকো ১৯৮৬, কোস্টারিকা ১৯৯০, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪, নাইজেরিয়া ১৯৯৮, চীন ২০০২)। কার্লোস আলবার্তো পাহেইরা (কুয়েত ১৯৮২, আরব আমিরাত ১৯৯০, ব্রাজিল ১৯৯৪ ও ২০০৬, সৌদি আরব ১৯৯৮, দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১০)।
সবচেয়ে বেশি বয়সী কোচ—অটো রেহেগাল (৭১ বছর ৩১৭ দিন, গ্রিস ২০১০)।
খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে টুর্নামেন্ট জয়—মারিও জাগালো (ব্রাজিল, ১৯৫৮ ও ১৯৬২ খেলোয়াড়, ১৯৭০ কোচ) ও ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার (জার্মানি, ১৯৭৪ খেলোয়াড়, ১৯৯০ কোচ)।