তুলশীগঙ্গা নদীতে বাধ দিয়ে মাছ শিকার, রবিশস্য চাষ ব্যহত হওয়ার শঙ্কা

0

গুরুদাসপুর (নাটোর) সংবাদদাতা

গুরুদাসপুরের তুলশীগঙ্গা নদীতে বাঁশের বাধ দিয়ে মাছ শিকার করছেন প্রভাবশালীরা। ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সময়মতো পানি না নামায় চলতি আমন ধান কাটতে পাড়ছেনা কৃষক। একারনে হুমকিতে পড়েছে অনন্তত ১৫টিরও বেশি বিলের রবিশস্য আবাদ।

ভুক্তভোগি কৃষকরা প্রতিকার চেয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কৃষকদের পক্ষে ২৯ অক্টোবর অভিযোগটি দেন সিধুলী গ্রামের কৃষক ওবায়দুল।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা হয়ে সোনবাজু, চাকল বিল, মাধ্যম কৈগাড়ী, বড়বিল, খলিশাগাড়ী, সমাজগাড়ী, জ্যালীগাড়ী, কাঁকড়াগাড়ীসহ নাজিরপুর-ধারাবারিষা ও বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি বিলের পানি ওই তুলশীগঙ্গা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিনুরধর স্লুইসগেট হয়ে বেরিয়ে যায়। অথচ সিধুলী পশ্চিম পাড়া ব্রীজ সংলগ্ন এলাকার পূর্বপাশে তুলশীগঙ্গা নদীর এপার ওপারজুড়ে বাঁশের বাধ দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে- গুরুদাসপুরের ধারাবারিষা ইউনিয়নের সোনাবাজু চাকল বিল, টেংড়াগাড়ি বিল এবং তুলশীগঙ্গা নদীর পশ্চিম অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮০ একর জলাশয় রয়েছে। উন্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে চলতি বছরের ১ মার্চ হতে এক বছর মেয়াদে ৩৮ লাখ টাকায় ওই ৮০ একর জলাশয় লিজ নেন সোনাবাজু গ্রামের লিয়াকত আলী ও লিটন সরদার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সিধুলী পশ্চিম পাড়া ব্রীজ সংলগ্ন পূর্বপার্শ্বে তুলশী গঙ্গা নদীতে বাঁশের উপকরন (বেড়া) দিয়ে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ শিকার করা হচ্ছে। সেখানে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক সোনাবাজু গ্রামের হযরত আলীর ছেলে জাকারিয়া জানালেন- নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে ৩৮ লাখ টাকায় সরকারী ডাকের মাধ্যমে এক বছরের জন্য ওই জলাশয় লিজ নিয়েছেন।
ওই জলাশায়ের লিজ গ্রহিতা লিটন সরদার জানান, চাকল ও টেংড়াগাড়ি বিলের ৮০ একর জলাশয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে এক বছর মেয়াদে লিজ নিয়েছেন। তবে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ ধরা নিষেধ এ বিষয়টি তার জানা নেই।

এদিকে কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় ১৫টিরও বেশি বিলের পানি তুলশীগঙ্গা নদী দিয়ে নিস্কাশন হয়। কিন্তু প্রতিবছরই বর্ষা মওসুমের শেষের দিকে এসে এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা লিজের অজুহাতে নদীতে বাধ দিয়ে মাছ শিকার করেন। এতে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। এবছরও একই অবস্থা হয়েছে। এখনই বাধ খুলে না দিলে এসব এলাকার অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জমির উঠতি আমন ধান কাটা এবং সংগ্রহ করা যাবে না। তাছাড়া রবিশস্য আবাদ ব্যহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

এসব এলাকার কৃষক ওবায়দুল, মনিরুল, আব্দুল খালেক, জাহিদুল ইসলামসহ অন্তত ২০ জন কৃষক অভিযোগ করেন- তুলশীগঙ্গা নদীর মাধ্যমে কৈগাড়ী,বড় বিল,খলিশা গাড়ী,সমাজী গাড়ী,জ্যালী গাড়ী,চাকল বিল,কাঁকড়া গাড়ীসহ ১৫টির বেশি বিলের পানি প্রবাহিত হয়। কিন্তু বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের কারনে এসব বিলের পানি দ্রুত নামতে পারছেনা। ফলে রবিশস্য ফসল চাষ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে কৃষক।

ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন- তার পরিষদ এলাকার তুলশীগঙ্গা নদীতে বাধ দেওয়ার ব্যবপারে কৃষকরা তার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। তিনিও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আবু সৈয়দ জানান, গুরুদাসপুরের চাকল বিল এবং টেংড়াগাড়ি বিলের ৮০ একর জলাশায় স্থানীয় মৎস্য চাষীদের কাছে মাছ চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে। তবে তুলশী নদী লিজ দেয়া হয়নি। কোন প্রভাবশালী যদি নদীতে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে মাছ শিকার করলে সেটা সম্পূর্ন অবৈধ।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন- নতীতে বাধ দিয়ে মাছ শিকার করা অবৈধ। কৃষকেদর দেওয়া অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। দ্রুত ওই বাধ অপসারনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মুক্ত প্রভাত/হেনা আহম্মেদ

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.