বান্দরবানে আসন ধরে রাখতে মরিয়া আ.লীগ, সুযোগ নিতে চায় বিএনপি

0

এস.কে নাথ, বান্দরবান প্রতিনিধি

বাংলাদেশের সর্বশেষ সংসদীয় আসন পার্বত্য জেলা বান্দরবান। সমতলের চেয়ে যেমন ভিন্ন এখানকার ভৌগলিক অবস্থান, তেমনি ভিন্ন এখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী।

পাহাড়ী বাঙালীসহ ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস এ জেলায়। তাই অন্য জেলার চেয়ে এখানকার ভোটের হিসেবটাও ভিন্ন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সমতলের মত এ জেলায়ও শুরু হয়েছে নির্বাচনী আমেজ।

৭টি উপজেলা ২টি পৌরসভা ও ৩৩ টি ইউনিয়ন নিয়ে ৩০০ নং সংসদীয় আসন পার্বত্য জেলা বান্দরবান। নির্বাচন অফিসের মতে এ আসনে মোট ২ লাখ ৪৬ হাজার ১৮৩ জন ভোটার রয়েছে।

এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৮ হাজার ২৯ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৪ জন। এখানে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের প্রভাব থাকলেও মূলত আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যেই লড়াই হয়ে থাকে। তাই নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় দুদলের সম্ভাব্য প্রাথীরা ছুটে বেড়াচ্ছে জেলার সর্বত্র।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান সাংসদ পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। তবে বিএনপি প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি মিসেস ম্যাম্যচিং ও সাবেক সাংসদ ও সভাপতি সাচিং প্রু জেরী ।

পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং ইউপিডিএফ এর সম্ভাব্য কোন প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় এখনো মাঠে দেখা যাচ্ছে না। ১৯৯২ সাল থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। এখানকার বর্তমান সাংসদ বীর বাহাদুর পাঁচ বারের এমপি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকায় এলাকায় দীঘর্ মেয়াদে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন সে হিসেবে আগামী নির্বাচনী দৌড়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর বাহাদুর অনেকটা এগিয়ে। তাই নির্বাচনে আওয়ামীগ প্রার্থী জয়লাভ করবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।

সমতলের চেয়ে পাহাড়ে ভোটের হিসাব অনেকটা ভিন্ন। পাহাড়ে জাতীয় রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি রয়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে জেএসএস, ইউপিডিএফ অন্যতম। জাতীয় নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলো একটি প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মধ্যে এ প্রভাবটি বিরাজ করে। বান্দরবান জেলায় বসবাসরত জন সংখ্যার মধ্যে বাঙ্গালীর চেয়ে পাহাড়ী ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই এই আসনে জয় লাভ করতে হলে আওয়ামী লীগ বিএনপি উভয়েরই আঞ্চলিক দলের সমর্থন প্রয়োজন।

বিগত বছরের নির্বাচন গুলোতে আঞ্চলিক দল জেএসএস এর সাথে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক বজায় থাকায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করে। কিন্তু সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা অপহরণের ঘটনা নিয়ে জেএসএস এর সাথে আওয়ামী লীগের দ্বন্ধ সৃষ্টি হয়।

যা আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে বহিষ্কৃত দলের দীর্ঘদিনের সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা ও সেক্রেটারী কাজী মো: মজিবুর রহমান দলের বাহিরে থাকায় আগামী নির্বাচনে প্রভাব আসবে বলেও মনে করেন তৃণমুলের নেতারা।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে প্রায় ৩২ হাজার ভোট পায় প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা। তাই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এবং সাবেক সভাপতি ও সেক্রেটারীর সাথে বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে নির্বাচনে ভোটের হিসাব জটিল হবে আওয়ামীলীগের জন্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, দলের মধ্যে নির্বাচনে কৌশলগত কাজ করার জন্য নেতার অভাব রয়েছে। সিনিয়র নেতাদের সাথে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সম্পর্ক ভাল না। যা নির্বাচনে প্রভাব আসবে বলেও মনে করেন তারা।

তবে এসব কথা অস্বীকার করে আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, আওয়ামীলীগ দেশের একটি বৃহত্তর ও মহান স্বাধীনতার স্বপক্ষীয় দল। বান্দরবানে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী বীর বাহাদুর এবং নৌকার প্রার্থী হিসেবে সেই নির্বাচন করবে।

গত ২৫বছর ধরেই বান্দরবান আসনে দলের একক প্রার্থী হিসেবে বীর বাহাদুরই বিজয়ী হয়ে আসছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বীর বাহাদুর বিজয়ী হবেন ইনশা আল্লাহ।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক লক্ষী পদ দাশ মুক্ত প্রভাতকে জানান,বর্তমান সাংসদ ও পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর পার্বত্য এলাকায় কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করে মানুষের আশা আখাঙ্কার প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছেন বলেও মনে করেন তিনি। আশা করি জননেত্রী শেখ হাসিনার একান্ত বিশ্বস্ত বীর বাহাদুর আবারও মনোনয়ন পাবেন।

অপরদিকে আসনটিতে জয়লাভ করতে বিএনপির দুগ্রুপের দ্বন্ধ নিরসনের আভাস দিচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে দলটির সভাপতি মাম্যাচিং ও সাবেক সভাপতি সাচিংপ্রু জেরির দ্বন্ধের কারণে বিগত নির্বাচন গুলোতে বিএনপির প্রার্থী পরাজিত হয়ে আসছে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।

তাই আগামী নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সবাই মিলে মিশে কাজ করবে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আসনটি নিজেদের দখলে আনতে বিএনপি আগের চেয়ে অনেক সংঘবদ্ধ। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন কোন্দল এবং আঞ্চলিক দলের সহযোগিতা নিয়ে আগামী নির্বাচনে আসনটি বিএনপি জয়লাভ করবে বলে আশা করেন বিএনপির এই নেতা।

মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.