বাগমারায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের বাইরে আরো ১০ অবৈধ ক্লিনিক

0

সম্প্রতি বাগমারা উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় ৭ টি অবৈধ ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়ানষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ক্লিনিক গুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের জরিমানা ও ২টি ক্লিনিক সীলগালা করে দেওয়া হলেও উপজেলা ব্যাপি আরো ১০ টি ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়ানষ্টিক সেন্টার রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসব অবৈধ ক্লিনিকগুলোর অধিকাংশই তাহেরপুর এলাকার। ক্লিনিকগুলো হলো, তাহেরপুরের রোজা হেল্থ কোয়ার এন্ড ডায়ানষ্টিক সেন্টার, একই এলাকার ডা: সাব্বির ক্লিনিক, গ্রীন ল্যান্ড ক্লিনিক, তাহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল, মোহনগঞ্জের ইনসাফ ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, ঝিকরা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, শিকদারী ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ভবানীগঞ্জ বাসট্রান্ড এলাকার ডিজিটাল হেল্থ কেয়ার সহ আরো ৩/৪ টি প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠান উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাদের অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে গেলেও কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দেখেও না দেখার ভান করে চলেছে। এ নিয়ে জরিমানা প্রদানকারী ক্লিনিক মালিকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা ওই সমস্ত ক্লিনিকের কর্মকান্ড খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনার দাবী জানিয়েছেন।
উপজলা প্রশাসন ও ভুক্তভোগি কিøনিক মালিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দুটি পৌরসদর সহ গুরুত্বপূর্ন এলাকায় প্রায় বিশটির মত অবৈধ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে। এগুলোর কোনটিরও বৈধ লাইসেন্স নেই। সবগুলোই চলছে লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন থাকার কথা প্রচার করে। গত মাসের ১৪ জুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জাকিউল ইসলাম ভবানীগঞ্জ পৌর এলাকার ৭টি অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জরিমান আদায় ও দুটি ক্লিনিক সীলগালা করে দেন। ক্লিনিক গুলো হলো মা ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, ভবানীগঞ্জ ক্লিনিক, মোহনা ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, ফারজানা ক্লিনিক, স্বচ্ছ ক্লিনিক, শিখা ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়ানষ্টিক সেন্টার ও মাদার মিশন হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড। এর মধ্যে ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা পরিলক্ষিত হওয়ায় স্বচ্ছ ক্লিনিক ও মাদার মিশন হাসপাতালকে সীলগালা করে দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। সে সময় অভিযানের খবর পেয়ে ভবানীগঞ্জ বাজারের ফজিলাতুন্নেছা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ক্লিনিকটিতে তালা মেরে আগেই সটকে পড়ে। আদালত সূত্রে জানা যায়, এসব ক্লিনিক গুলোর কোনটারও বৈধ কাগজপত্র নেই। অনেকের লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ক্লিনিকগুলো অধিকাংশই অস্বাস্থ্যকর। সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার ও নার্সের স্বল্পতা রয়েছে। অনেক ক্লিনিকে কোন আবাসিক ডাক্তার না থাকা ও প্রশিক্ষিত নার্স না থাকা। এছাড়া ক্লিনিক গুলোতে কোন সেবা মূল্য না টাঙ্গিয়ে গ্রাহক হয়রানীর মাধ্যমে অধিক মূল্য আদায় করা ও প্রয়োজনের বাইরে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রোগিদের হয়রানী ও টাকা আদায় করা, নির্ধারিত বেডের চাইতে অতিরিত্ত বেড স্থাপন, অজ্ঞানের ডাক্তার না থাকা সহ প্রায়ই এসব ক্লিনিকে প্রসুতি ও রোগি মৃত্যুর ঘটনা অহরহ পর্যায়ে পৌছেছিল। এসব নানান কারন সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে ভ্রাম্যমান আদালত ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে অভযান পরিচালনা করে তাদেরকে বিভিন্ন অংকের জরিমানা করে দুটি ক্লিনিক সীলগালা করে দেয়। অভিযোগ রয়েছে সীলগালা করে দেওয়া মাদার মিশন হাসপাতালটি সম্প্রতি কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া পরিচালনার পাঁয়তারা করা হলে সেখানে পুনরায় উপজেলা সহকারি কমিশনার ভুমি আব্দুল্লাহ আল মামুন ছুটে গিয়ে পুনরায় সতর্ক করে দেন।
এ দিকে উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ এলাকার ৭ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আরো ৮/১০ টি ক্লিনিক অভিযানের ব্ইারে থাকায় ওই ৭ ক্লিনিক মালিকদের অধিকাংশই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পরিচালক জোবাইদুর রহমান ও ও ফারজানা ক্লিনিকের পরিচালক হাফিজুর রহমান সহ ৩/৪ টি ক্লিনিকের পরিচালকরা জানান, আমরা উপজেলা সদরে ক্লিনিক পরিচালনা করি। এখানে প্রায় সিভিল সার্জন সহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসেন। এছাড়া ইউএনও মহোদয় এখানেই থাকেন। এসব কারণে আমরা খুব সতর্কভাবে ক্লিনিক পরিচালনা করে থাকি। অথচ উপজেলার আনাচে কানাচে নামমাত্র এবং সাইনবোর্ড সর্বস্ব ক্লিনিক পরিচালিত হলেও প্রশাসন তাদের ব্যাপরে নাক গলায় না। তাহেরপুরের এক ক্ষমতাসীন নেতার কারণে সেখানে অভিযান পরিচালনায় কর্তৃপক্ষের অনীহা রয়েছে বলেও অনেক ক্লিনিক মালিক অভিযোগ করেছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জাকিউল ইসলাম দৃঢ়তার সাথে বলেন, আইন সকলের জন্য সমান ভাবে প্রয়োগ করা হবে। ভ্রাম্যমান আদালতটি চলমান প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে সবগুলো ক্লিনিকের কার্যক্রম আমরা খতিয়ে দেখবো। অনিয়ম থাকলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে অচিরেই ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পুনরায় চালু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.