কবিতায় আল মাহমুদ!

0

কবি আল মাহমুদ বর্তমান সময়ের একজন বর্ষিয়ান লেখক। যার লিখনির ক্ষুরধারের সামনে বাতিল ভয়ে আতঙ্কে চুপসে থাকে । তাকে নিয়ে আজকের আয়োজন—-

দেশ প্রেমে লিখেছেন- ‘নোলক’ “আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেলে শেষে হেথায় খুঁজি, হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে। পুকুর পাড়ে গিয়েছিলাম, আছে তোমার কাছে হাত দিও না শরীর আমার ভরা বোয়াল মাছে।” ‘দ্বিতীয় ভাঙ্গন’ কব্য গ্রন্থে ‘যাবনা তোমার সাথে, হে দেশজননী’ কবিতায় বলেছেন- “আমি আর যাব না তোমার সাথে, হে আমার দেশজননী, আর না। কারণ তোমার যাত্রা উদ্দেশ্যবিহীন কিন্তু আমার কলম আমার নিশান হয়ে দুলে উঠে লিখছে, না না না। ও রক্তাম্বর পরিহিতা স্বৈরিণী স্বদেশ, তোমার দিগ্বলয়ে কেবল হা হুতাশ আর স্বজন হারানোর বিলাপ। তোমার স্তনাগ্রচূড়ায় মানবশিশুর জন্যে তিক্ত নিম মাখানো প্রত্যাখ্যানের কৃষ্ণবলয়।” উনসত্তরের ছড়া-১ “ট্রাক! ট্রাক! ট্রাক! শুয়োরমুখো ট্রাক আসবে দুয়োর বেঁধে রাখ। কেন বাঁধবো দোর জানালা তুলবো কেন খিল? আসাদ গেছে মিছিল নিয়ে ফিরবে সে মিছিল।” প্রেমের খোজে ‘তোমার জন্য দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী’ কবিতায়- “কাকে তুমি প্রেম বলো? কি জিনিস মনের পিরিতি? মায়া কায়া হায়া লজ্জা বল তবে কোথায় বিরাজে? কোথায় প্রেমের শিরা, এত ঘাম স্তনের দেরাজ? তাহলে উৎস নেই, দেহে নেই প্রেমের কোন স্মৃতি?” ‘সোনালী কবিনে’ নারীকে স্বার্থহীন আহবান- “সোনার দিনার নেই, দেনমোহর চেয়না হরিণী যদি নাও, দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দু’টি, আত্মবিক্রয়ের স্বর্ন কোনোকালে সঞ্চয় করিনি আহত বিক্ষত করে চারদিকে চতুর ভ্রুকুটি; ভালবাসা দাও যদি আমি দেব আমার চুম্বন, ছলনা জানিনা বলে আর কোনো ব্যাবসা শিখিনি; দেহ দিলে দেহ পাবে, দেহের অধিক মূলধন আমার তো নেই সখি, যেই পণ্যে অলঙ্কার কিনি।” ‘জুলেখার আহবান’ কবিতায় ইউসুফের প্রতি জুলেখার আবেদন- “তখন স্বপ্নের মতো মনে হবে, মিশরের জুলাখা মালেকা দু’বাহু উন্মুক্ত করে ডেকেছিলো চিরবন্দী লাঞ্ছিত তোমাকে। ডেকেছিলো কুসুম শয্যায় তার খুলে ফেলে নীবির বাঁধন। খুলে ফেলে কেশপাশ দূরে রেখে রাণীর সম্মান চেয়েছিলো তোমার মতন কোন ভাগ্যহত দাসের চুম্বন।” নারীকে কবি বিভিন্ন কবিতায় অনেক আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন। যেমন ‘সেলাই করা মুখ’ কাব্য গ্রন্থে ‘আমি গলবো, আমি বলবো ভালবাসি’ কবিতায় নারীর প্রতি কাম ও মোহ নয় সম্মান ও শ্রদ্ধার কথা তুলে ধরেছেন- “পুরুষ যখন গলতে থাকে দেখ তার চোখ, যেন নরক থেকে খুঁজে বের করে এনেছে দুটি পাপী মার্বেল। এ তার প্রতিফলন যন্ত্র। মাছের চোখের মতো পাতি পড়ে না। শুধু দেখে, কী দেখে? আমার নাম, না আমার নাম নয়। আমার চেহারা, না আমার মুখাবয়ব নয়, শুধু একটাই লক্ষ, আমার বুক, আমার যুগল মন্দির। ফুল নিয়ে আয় হারামজাদা। পুঁজো দে, মাথা নত কর। তারপর মন্ত্রের মতো বলত থাক, নারীর যতগুলো নাম আছে। সাবধান জননী শব্দটা বাদ দিবি না। কেঁদে ওঠ মা, মা বলে। তারপর কপাল মাটিতে ছুইয়ে বল, প্রিয়তমা। বল ক্ষমা, ক্ষমা, ক্ষমা। তারপর আমি গলবো। আমি বলবো ভালোবাসি।” মত প্রকাশ নিয়ে কি দারুন কথা বলেছেন ‘সেলাই করা মুখ’ কবিতায়- “তুমি কেন বলো না আমি জানি না তোমার মুখ থেকে কেন জানি জানি জানি শব্দ বের হয়ে আসে? খামোশ! আর কোন কথা নয় তোমার ঠোঁট দুটি আমি কালের সুঁই-সুতোয় সেলাই করে দেব। চুপ আর কোন শব্দ নয়। আর ভবিষ্যৎবাণী নয়।” নির্ভীক কবি ‘সাহসের উপমা’ কবিতায় বলেছেন- “সাহস হলো, বিদ্যুৎ চমকের মতো বিপদ আর মানুষের অসহায়তার ওপর দিয়ে যা হৃদয়ের ভেতরে সঞ্চারিত হয়। কিংবা ঈমানের উপমা হলো সাহস।” অনাচার ও অত্যাচারে ভরপুর ধরনী দেখে কবি ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ কবিতায় লেখেন- “মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে মনে হয় রক্তই সমাধান, বারুদই অন্তিম তৃপ্তি; আমি তখন স্বপ্নের ভেতর জেহাদ, জেহাদ বলে জেগে উঠি।” সত্যে ও ন্যায়ের কবি ‘আমাদের মিছিল’ কবিতায় এক শ্বাস্বত পথ চলার কথা বলেছেন- “আমাদের এ মিছিল নিকট অতীত থেকে অনন্ত কালের দিকে আমরা বদর থেকে ওহুদ হয়ে এখানে, শত সংঘাতের মধ্যে এ কাফেলায় এসে দাঁড়িয়েছি। কে জিজ্ঞেস করে আমরা কোথায় যাবো? আমরা তো বলেছি আমাদের যাত্রা অনন্ত কালের। উদয় ও অস্তের ক্লান্তি আমাদের কোনদিনই বিহবল করতে পারেনি।” ছোট বেলায় পড়া এই কবিতা না বললেই নয়। এ যেন প্রতিটা শিশু কিশোরের মনের কথা!- “আম্মা বলেন, পড়রে সোনা আব্বা বলেন, মন দে; পাঠে আমার মন বসে না কাঁঠালচাঁপার গন্ধে। আমার কেবল ইচ্ছে জাগে নদীর কাছে থাকতে, বকুল ডালে লুকিয়ে থেকে পাখির মতো ডাকতে। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে কর্ণফুলীর কূলটায়, দুধভরা ঐ চাঁদের বাটি ফেরেস্তারা উল্টায়। তখন কেবল ভাবতে থাকি কেমন করে উড়বো, কেমন করে শহর ছেড়ে সবুজ গাঁয়ে ঘুরবো ! তোমরা যখন শিখছো পড়া মানুষ হওয়ার জন্য, আমি না হয় পাখিই হবো, পাখির মতো বন্য।” কবি আল মাহমুদ আমাদের প্রধান কবি। এখন তিনি চোখে দেখেন না কানে ভাল শোনেন না কিন্তু তার আন্তর চক্ষু ও কর্ণ অনেক বিস্তৃত। তিনি যেন আরো নতুন নতুন লেখা আমাদের দিতে পারেন আল্লাহর কাছে এই কামনা।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.