কিংবদন্তী মাদিবার ১০০তম জন্মদিন!

0

নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় রাষ্ট্রনায়কদের একজন। যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহু বর্ণ ভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, প্রখর রসবোধ, তিক্ততা ভুলে বৈরি প্রতিপক্ষের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়ার মত উদারতা এবং তাঁর বর্ণাঢ্য ও নাটকীয় জীবন কাহিনী—এসব মিলিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তী। বর্ণবাদের অবসানের পর ১৯৯৪ সালের ১০ই মে নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন নেলসন ম্যান্ডেলা। এর মাত্র এক দশক আগেও সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ শাসিত দক্ষিণ আফ্রিকায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ছিল এক অকল্পনীয় ঘটনা। এই পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও তিনি ভূমিকা রাখেন।

১৯৯৩ সালে তাঁকে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। ১৯১৮ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন ইস্টার্ণ কেপ প্রদেশের থেম্বো রাজকীয় পরিবারের কাউন্সিলর। বাবা নাম রেখেছিলেন রোলিহ্লাহলা ডালিভুঙ্গা মানডেলা। স্কুলের এক শিক্ষক তার ইংরেজী নাম রাখলেন নেলসন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার আপামর মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ‘মাদিবা’। নেলসন ম্যান্ডেলার আসল নাম রোলিলাহলা ম্যান্ডেলা। জোসা ভাষায় যার অর্থ গাছের ডাল ভাঙা। যার আরেকটি মানে উত্তেজনা সৃষ্টিকারক। তার নাম পরিবর্তন করার পরেও দেখা গেল যে তিনি সেই ইংরেজদের উত্তেজনার কারণ হয়েই রয়ে গেলেন!

১৯৬০ সালে শার্পভিলে কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ৬৯ জন নিহত হলে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আদৌ আর লাভ হবে কিনা সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এসময় এক বক্তৃতায় নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, সরকার যখন নিরস্ত্র এবং প্রতিরোধবিহীন মানুষের ওপর পাশবিক আক্রমণ চালাচ্ছে, তখন সরকারের সঙ্গে শান্তি এবং আলোচনার কথা বলা নিস্ফল। এএনসি সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নেলসন ম্যান্ডেলাকে গ্রেফতার করা হয়, বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়। শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কুখ্যাত রুবেন দ্বীপে তাঁর দীর্ঘ ২৭ বছরের কারাজীবন।

তিনি ১৯৯০ সালে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন, এর চার বছর পর ১৯৯৪ সালে বিপুল ভোটে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং মাত্র একটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন, যা আফ্রিকার রাজনীতিতে বিরল এক ঘটনা। জাতিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের কারণে নেলসন এবং তার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস এর সদস্যদের নাম প্রায় ২০০৮ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ম্যান্ডেলার হাতের ছাপ অবিকল আফ্রিকান মহাদেশের আকৃতির মতো। হ্যা এটা একেবারে সত্যি ঘটনা! একবার তিনি ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের নাম ধরে ডেকেছিলেন এবং তার ওজন এবং তার ড্রেসিং শৈলী নিয়েও কিছু মন্তব্য করে বিকর্কে জড়িয়েছিলেন। ম্যান্ডেলার কিছু উক্তিঃ- “আমার সফলতার ভিত্তিতে আমাকে বিচার করোনা, আমাকে বিচার কর আমার ব্যর্থতা এবংব্যর্থতার পর ঘুরে দাঁড়ানোর ভিত্তিতে।” “আমি সাধু নই, তবে যদি সাধুকে এমন এক পাপী হিসেবে বিবেচনা কর, যে সৎ হবার জন্য তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাহলে আমি তাই”। “কেবল শৃঙ্খলহীন হওয়া নয়, বরং স্বাধীন হওয়া মানে শ্রদ্ধা এবং অন্যের স্বাধীনতা বৃদ্ধির সাথে বসবাস”। “বলা হয়ে থাকে যে সত্যিকার অর্থে কেউ একটি জাতিকে জানতে পারে না যতক্ষণ না কেউ একজন এর কারাগারে বন্দী থাকে”। ‘সুউচ্চ পাহাড়ে ওঠার পরই কেউ আবিষ্কার করে, এ রকম আরো অনেক পাহাড় রয়েছে, যাতে আরোহণ করা যায়’ ‘পতনের ভয়ে থাকার চেয়ে মিথ্যার মধ্যে থাকা বেশি গৌরবের মনে হয় কিন্তু উত্থানের সময় আমরা বারবার পড়ে যাই’ ‘সফলতা দিয়ে আমাকে বিচার কোরো নাআমি কতবার পরাস্ত হয়েছি এবং কতবার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি তা দিয়ে আমাকে বিচার কোরো’ “নেতৃত্ব দানের জন্য তোমাকে থাকতে হবে পেছনে এবং অন্যদের রাখতে হবে সামনে। বিশেষ করে বিজয় উৎসব ও সুন্দর ঘটনার সময় তোমার পেছনে থাকাই ভালো। তবে বিপজ্জনক মুহূর্তে তোমাকে অবশ্যই সামনে অবস্থান নিতে হবে। তাহলে জনগণ তোমার নেতৃত্বের প্রশংসা করবে।”

১৮ই জুলাই নেলসন ম্যান্ডেলা দিবস বলে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। নেলসন ম্যান্ডেলা বাংলাদেশে এসেছিলেন ১৯৯৭ সালের ২৫শে মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাকেসহ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেলকে। নেলসন ম্যান্ডেলা ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ (৯৫ বছর) সালে মৃত্যু বরণ করেন। নেলসন ম্যান্ডেলা না থাকলেও তাঁর বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রামে বেঁচে থাকবেন পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত। তিনি আছেন সকল মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.