গুরুদাসপুরে  কৃষকদের বিক্ষোভ

0

গুরুদাসপুর ও নাটোর সদর উপজেলার সীমান্তে শ্যামপুর ফসলের মাঠ। রয়েছে বসত-বাড়িও। গ্রামটির মাঝ দিয়ে গুরুদাসপুর-নাটোর সড়ক। ওই সড়কের দক্ষিণের মাঠে ইটভাটা ও বেশ কিছু পুকুর রয়েছে। সেখানে পানি নেই। কারন পানি নিস্কাশনের নালায় তৈরি করা হয়েছে মাটির বাঁধ।
এই বাঁধের কারনে উত্তর পাশে প্রায় দেড় হাজার একরের কৃষি জমি ও ৪০টি বাড়ি জলাবদ্ধতায় ডুবে রয়েছে। এসব বাড়ির নলকুপ ও টয়লেটগুলো ডুবেগেছে। পয়োঃবর্জ্য ছড়িয়ে পড়ায় বিষিয়ে উঠেছে পরিবেশ। বসত-বাড়ির আঙিনায় লাগানো তরিতরকারির গাছগুলো মরেগেছে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, পাশের নাটোর সদর উপজেলার চিড়াকোলা গ্রামের সোলায়মান আলী নামে এক ব্যক্তি প্রায় দুই মাস আগে নালার মাঝ পথে মাটির বাঁধ নির্মান করে কৃষকের এমন ক্ষতি করছেন। এনিয়ে এলাকার ১৭০জন কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। সেসময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধটি কেটে দেওয়া হলে পানি নামতে শুরু করে।
সর্বশেষ গত এক সপ্তাহ আগে আবারও বাঁধটি নির্মান করেন সোলায়মান আলী। পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠায় গতকাল বৃহষ্পতিবার দুপুরে ভুক্তভোগী কৃষকরা উপজেলা সদরে এসে বিক্ষোভ করেন। এবং দূর্ভোগ লাঘবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা না থাকায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) গনপতি রায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে কৃষকদের আশ্বস্ত করেন।
গতকাল বৃহষ্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখাগেছে, নাটোরের গুরুদাসপুরে পানি নিষ্কাশনের নালাবন্ধ করে মাছ চাষ করায় উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর মাঠে দেড় হাজার বিঘা কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। একারনে এসব জমিতে রোপা আমনসহ অন্যান্য ফসল ফলাতে পারছেনা কৃষক। পাশাপাশি ওই এলাকার প্রায় ৪০টি বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী এরশাদ আলী, মামুন হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাটির বাঁধটির কারনে পানি বাড়ির উঠোন ও ঘরের মধ্যে চলে এসেছে। বিকল্পভাবে চুলা বসিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। নলকুপ ও টয়লেট ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে সাপের আতঙ্ক। অথচ ৮৮ সালের বন্যাতেও তাদের এমন দুর্ভোগ হয়নি।
ভুক্তভোগী কৃষক এনামুল হক ছলিম উদ্দিন ও হাবিল উদ্দিন অভিযোগ করেন, বছর জুড়েই তিনটি ফসলসহ নানা রকম সবজীর চাষ হতো এলাকার মাঠে। কিন্তু সোলায়মান আলীর মাটির বাঁধের কারনে এখন কোন আবাদই করতে পারছেননা কৃষক।
কয়েকজন কৃষক আরো অভিযোগ করেন, মাঠে তাদের পাকা ধান হাটু-কোমড় পানিতে থাকায় শ্রমিক অভাবে কাটতে পারছেননা। এলাকার অনেক কৃষকের আম-লিচু-পিয়ারা বাগানের গাছ মারা যাচ্ছে। প্রশাসনে অভিযোগ করেও স্থায়ী সমাধান হচ্ছেনা।
এসব বিষয়ে প্রতিকার চাওয়ায় সোলায়মান আলী এলাকার ৯জন কৃষকের বিরুদ্ধে গত ২৮ জুন হয়রানীমুলক মামলা দায়ের করেন। বাঁধ অপসারনের নেতৃত্ব দেওয়ার মোমীন আলী (৫৫) অভিযোগ করেন, মামলা করার পর সোলায়মান আলী তাকে মারধর করেন। এখন অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে।
নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকতরানা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সোলায়মান আলী এলাকায় দাঙ্গাবাজ প্রকৃতির মানুষ। বিষয়টি সমাধানের জন্য তাকে অনুরোধ করা হলেও কর্নপাত করছেননা তিনি।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম গতকাল বৃহষ্পতিবার বলেন, জলাবদ্ধতার কারনে রোপা আমন চাষসহ অন্য ফসলগুলোর আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে। এব্যপারে অভিযুক্ত সোলায়মান আলীর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.