ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনার ভাঙ্গনে সহায়-সম্বলহীন চার লাখ মানুষ

0

ফরহাদ আকন্দ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গত ১৪৬ বছরে ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর ভাঙ্গনে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার প্রায় ৫৪৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সময়ের নদীভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়েছে এই চার উপজেলার প্রায় চার লাখেরও বেশি মানুষ।

নদীভাঙ্গন ঠেকাতে এসব এলাকায় স্থায়ীভাবে নদীর তীর সংরক্ষণে (সিসি ব্লক দ্বারা) কাজ হয়েছে খুবই কম। ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনার তীর সংরক্ষণ করা আছে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার এলাকায়। ভাঙ্গন ঠেকাতে স্থায়ীভাবে তীর সংরক্ষণের দাবি করেছেন নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।

জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা ও উপজেলা পরিসংখ্যান বিভাগ সুত্রে জানাগেছে., ১৮৭২ সালে ভবানীগঞ্জ মহকুমার পূর্বপাড়জুড়ে ভাঙ্গন দেখা দেয়। ১৮৭৫ সালে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে গাইবান্ধা নামক স্থানে মহকুমা সদর স্থানান্তর করে নামকরণ করা হয় গাইবান্ধা মহকুমা। এই গাইবান্ধা মহকুমাকে ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

১৮৭২ সালে শুরু হওয়া ভাঙ্গনে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৪৬ বছরে নদী গিলেছে ভবানীগঞ্জ থেকে গাইবান্ধার দিকে ৭ কিলোমিটার এলাকা (কোথাও ৭ কিলোমিটারেরও বেশি)। এছাড়া ৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর পশ্চিম তীরজুড়ে স্থলভূমির প্রায় ৫৪৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিলীন হয় নদীগর্ভে। অব্যাহত নদীভাঙ্গনের শিকার হয়ে এসব এলাকার প্রায় চার লাখ মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়েছে।

নদীভাঙ্গনের শিকার হওয়াদের মধ্যে চরাঞ্চলের ১৬৫টি চরে বসবাস করেন ৩ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন বহু পরিবার। স্থানীয়ভাবে আশ্রয় না পেয়ে নদীভাঙ্গনের শিকার হওয়া অনেক মানুষ নদী তীরবর্তী এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৮১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৭১ হাজার মানুষ নদীভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়েছেন আর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ১৭৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা।

বর্তমানে নদীভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর, সদর উপজেলার কামারজানী, মোল্লারচর ও গিদারী, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া, উদাখালী, গজারিয়া, এরেন্ডাবাড়ী, ফজলুপুর ও ফুলছড়ি এবং সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী, সাঘাটা, হলদিয়া ও জুমারবাড়ী ইউনিয়ন।

এ দিকে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনার নদী তীরবর্তী এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, গাছপালা, রাস্তা-ঘাট ও বসতভিটাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গনরোধে চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অনেক সময় এই চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। ফলে প্রতিবছর সরকারের লাখ লাখ টাকা নদীর পানিতেই ধুয়ে যায়।

প্রতিবছর নদীভাঙ্গনে হাজার হাজার মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হলেও ভাঙ্গন মোকাবেলায় কাজ হয়েছে খুবই কম। বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে স্থায়ীভাবে নদীর তীর সংরক্ষণ করা আছে পুরাতন ফুলছড়ি হেডকোয়ার্টার এলাকা, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা বাজার, সদর উপজেলার কামারজানী বাজার ও বাগুড়িয়া, ফুলছড়ি উপজেলার সৈয়দপুর, কঞ্চিপাড়া ও বালাসীঘাট এবং সাঘাটা বাজার এলাকার মাত্র সাড়ে নয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

এসব এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ ১৯৯৭ সালে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৬ সালে। এছাড়া নদীভাঙ্গন ঠেকাতে নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মান সরকারের আর্থিক অনুদানে ১৯৯৪ সালে শুরু হওয়া সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের আনালেরছড়া ও ধুতিচোরা গ্রামে নদীর তীর সংরক্ষণসহ গ্রোয়েন নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯৭ সালে। যা নদীভাঙ্গনরোধে খুবই কার্যকরী হয়। তাই এসব গ্রোয়েন আরও নির্মাণের দাবি করেছেন নদীভাঙ্গন এলাকার মানুষ।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নদী ভাঙ্গনরোধে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে ফুলছড়ি উপজেলার বালাসিঘাট এলাকা, সিংড়িয়া-রতনপুর-কাতলামারী ও গজারিয়ার গণকবর এবং সদর উপজেলার বাগুড়িয়া এলাকার সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকা নদীর তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার কাজ চলছে। এ ছাড়া নদীভাঙ্গন ঠেকাতে নদীর তীর সংরক্ষণে কয়েকটি প্রকল্প পাঠানো আছে।

মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল 

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.