উত্যাক্তের প্রতিবাদ করায় ৫ ছাত্রের মাথা ‘ন্যাড়া’ করালেন চেয়ারম্যান
মোঃ রাসেদুজ্জামান সাজু, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ে বিনা অপরাধে শ্রেণিকক্ষে ডেকে শালিস-বৈঠকের মাধ্যমে পাঁচজন ছাত্রকে ন্যাড়া করার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল জব্বার নামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
বুধবার উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ওই পাঁচ ছাত্র এই অভিযোগ করে।
ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্ররা হলো:- রুবেল রানা, মো, সবুজ, সারোয়ার, আসিফ ও আশরাফুল।
অভিযুক্ত আব্দুল জব্বার সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও রুহিয়া থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। এছাড়াও তিনি ঢোলারহাট ইউনিয়নের ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- গত শনিবার পাঁচজন ছাত্র প্রাইভেট শেষ করে বাড়িতে ফিরছিল। পথে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে পথরোধ করে উত্যাক্ত করছিল রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের মোন্নাপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে লিটন (১৫) । এটি দেখতে পেয়ে ওই পাঁচজন শিক্ষার্থী তাঁর প্রতিবাদ করে। পরে লিটন সেখান থেকে চলে যায়।
সেই জেরে রবিবার দুপুর ২টার দিকে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার ওই পাঁচজন ছাত্রকে তাঁর বিদ্যালয়ে ডেকে নেন। এরপর বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে স্থানীয় মাতব্বরদের নিয়ে শালিস- বৈঠকের রায়ে পাঁচজন ছাত্র নিরপরাধ ছাত্রদের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার মারপিট করেন। এবং স্থানীয় এক নরসুন্দরকে (নাপিত) বিদ্যালয়ে ডেকে আনেন। পরে প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারের নির্দেশে সকলের উপস্থিতিতেই ওই নরসুন্দর (নাপিত) একজন একজন করে পাঁচজন ছাত্রকে ন্যাড়া করে দেয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র রুবেল রানা জানায়, আমরা নিরপরাধ দাবি করে প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারসহ অন্যদের হাত-পা ধরে কান্না করেছি, কিন্তু তারা শোনেননি। এ ঘটনার পর এলাকার মানুষ নানা ধরনের কথা বলছে, এমনকি বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরাও আমাদের নিয়ে কটুক্তি করছে। এখন লজ্জায় মানুষকে মুখ দেখাতে পারছি না।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ে এমএলএসএস মো. ফিরোজ বলেন, রবিবার দুপুরে ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির পাঁচজন ছাত্রকে নিয়ে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে শালিস-বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শালিস-বৈঠকেই পাঁচজন ছাত্রকে মারপিট করার পর ন্যাড়া করে দেয়া হয়। এসময় ছাত্ররা অনেক কান্নাকাটি করে। বৈঠকের নেতৃত্ব দেয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী বলেন, লিটন আমার পথরোধ করে জোরপূর্বক গোলাপ ফুল দেওয়ার চেষ্টা করে। এর প্রতিবাদ করে ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির পাঁচজন ছাত্র। শালিস-বৈঠকে লিটনের বিচার না করে নিরপরাধ পাঁচজন ছাত্রকে ন্যাড়া করে দেয়া হয়। আমি লিটনের শাস্তি দাবি করছি।
ছাত্রীর মা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ইভটিজিং করেছে লিটন, অথচ তাকে কোন শাস্তি দেওয়া হয়নি, উল্টো অন্যদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুল বারেক বলেন, আমাদের স্কুলের পাঁচজন ছাত্রকে ডেকে নিয়ে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারসহ অন্য মাতব্বররা ন্যাড়া করে দেয়। একজন শিক্ষকের কাছে এ ধরণের কাজ মোটেও কাম্য নয়। এর বিচার হওয়া দরকার।
১০ শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলামের বড় ভাই আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিনা অপরাধে আমার ভাইসহ আরও চারজন ছাত্রকে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। আমি এটার সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযুক্ত ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে রুহিয়া থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায় বলেন, থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোশারফ হোসেন বলেন, বিদ্যালয় হচ্ছে পাঠদান গ্রহণ করার জায়গা। সেখানে শালিস-বৈঠক তো প্রশ্নই আসেনা। কোন শিক্ষার্থী যদি অপরাধ করে তাহলে তার জন্য আইন আছে। পাঁচজন ছাত্রকে ‘ন্যাড়া’ করার ঘটনটি আমি জানিনা। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল