জমি দখলে বাধা দেওয়ায় চারজনকে গাছে বেঁধে নির্যাতন
সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান
বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে ভাড়াটিয়া অস্ত্রধারী দিয়ে একই পরিবারের ৪ জনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এসময় ১৭ বছর বয়সী যুবতিকে গাছে বেঁধে মধ্যযুগীও কায়দায় পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের ফাদুরছড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ফাইতং ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্যাতিত মাদরাসা ছাত্রীসহ আহতদের উদ্ধার করে পাশ্ববর্তি চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ২ জন হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছে।
ভুক্তভোগিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ফাইতং ফাদুরছড়া গ্রামে মৃত তফুর আলীর পুত্র আবদুল করিমের সাথে একই এলাকার নুরুল ইসলামের পুত্র মো: ফারুক পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় শালিসী বৈঠকে ও থানার বিচারে আবদুল করিম পক্ষ রায় পায়।
স্থানীয় বিচার শালীস না মেনে ফারুক বান্দরবান জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করে অসহায় কৃষক পরিবারকে হয়রাণী করে আসছিলেন। মামলা করেই ক্ষ্যন্ত হননি তনি। মঙ্গলবার দুপুরে চকরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অস্ত্রধারী ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী এনে আবদুল করিম এর জমি জোরপূর্বক জবর দখলে নেয়ার চেষ্টা করে।
এক পর্যায়ে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলাকারী ফারুক ও তার ভাই সাইফুল, বারেকসহ ভাড়াটিয়া শতাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা, ভাংচুর ও লুৎপাট চালায়।
হামলাকারীরা আবদুল করিম, তার স্ত্রী ছফুরা খাতুন (৫০), মৃত আলী আহমদের পুত্র নুর মোহাম্মদকে (৪০) হাত বেঁধে মারধর করেন এবং করিমের মাদরাসা পড়ুয়া মেয়ে জোহাইরা বেগমকে (১৭) গাছের সাথে হাত-পা ও মুখ বেধে শারীরিক নির্যাতন করেন।
এসময় ফারুক ও তার সঙ্গীয়রা করিমের বাড়িতে রক্ষিত স্থানীয় ফাইতং বায়তুল মামুর মসজিদের ১ লাখ টাকা সহ বাড়ির নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার এবং মালামাল সহ মোট ৫ লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
ফাদুরছড়া এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার থোয়াই হ্লা মার্মা বলেন, এই ধরনের নির্যাতন মানুষ করতে পারেনা। ফারুক ও সঙ্গীয়রা অমানুষ। এলাকার লোকজন এগিয়ে না এলে তারা করিমের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলত। তার মেয়েকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের বিষয়টি মর্মান্তিক।
লামা থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী অফিসার পুলিশের উপ-পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন বলেন, হামলাকারীরা মাদরাসা ছাত্রী জোহাইরা বেগমকে রসি দিয়ে গাছের সাথে প্রকাশ্যে বেধে নির্যাতনের এক পর্যায়ে মাদরাসা ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীরও চেষ্টা চালায়। নির্মম এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে স্থানীয় লোকজন ফাইতং পুলিশ ফাঁড়িকে খবর দিলে পুলিশ আহত ও নির্যাতিতদের উদ্ধার করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত ফারুক ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাদশাকে গ্রেফতার করে এবং অন্যান্য হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
লামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অপ্পেলা রাজু নাহা জানিয়েছেন, ফাইতংয়ে জমি জবর, হামলা ও নির্যাতনের খবর পেয়ে ফাইতং পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে থানায় মামলা নেওয়া হয়েছে।
মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল