ভারত রাশিয়া চুক্তি নতুন বার্তা দিচ্ছে
মুক্ত অনলাইন ডেস্ক
শুক্রবার ১৯তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক দ্বি-পাক্ষিক সম্মেলনে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভ্লাদিমির পুতিন বৈঠকে বসেন তখন সেদিকে ঘনিষ্ঠভাবে নজর রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। পাকিস্তানের নজর তো ছিলই। একারনেই যখন ভারত ও রাশিয়ার শীর্ষ নেতৃত্ব কোনো বৈঠকে বসেন তখন তা দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি তখন ভূ-কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এই সফরে পুতিনের যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিকে উপেক্ষা করে রাশিয়ার কাছ থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ কেনার চুক্তি করেছে ভারত। এর মাধ্যমে চীন ও পাকিস্তানকেও একটি বার্তা দিয়েছে ভারত। রাশিয়ার এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ বিশ্বের সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি চীনসহ বিভিন্ন দেশের হামলা থেকে ভারতকে সুরক্ষিত করতে সাহায্য করবে। এখনো চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত রয়েছে ভারতের।
এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নয়, আসছে মাসগুলোতে রাশিয়ার কাছ থেকে চারটি যুদ্ধজাহাজ, ২০০ সামরিক হেলিকপ্টার ও রাইফেল কিনবে ভারত। স্ট্যালিন পরবর্তী যুগ থেকে ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হলো রাশিয়া। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার সহযোগিতা ও ভূমিকা ছিল অসামান্য। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে ভারতের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করছে রাশিয়া।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের আলোচনা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা। একইসঙ্গে বিশ্বকে যারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তাদের জন্য এক পরোক্ষ সতর্কতাও। দুই নেতা আফগানিস্তানে পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাস দমনে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একইসঙ্গে সিরিয়া ও ইরানকে সমর্থন করেছেন। সব মিলিয়ে বিশ্ব স্থিতিশীলতার জন্য এই আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্বে ব্যাপক মেরুকরণ হয়। তখন পুঁজিবাদী ব্লকের নেতৃত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র, অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক ব্লকের নেতৃত্বে চলে আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের একমাত্র সুপারপাওয়ারে পরিণত হয় যুক্তরাষ্ট্র; কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই হিসাব বদলাতে শুরু করেছে। চীন বিশ্বে শক্তিশালী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। দুই বৈশ্বিক শক্তির প্রতিযোগিতায় ভারসাম্যমূলক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছে ভারত ও রাশিয়া।
ভ্লাদিমির পুতিন ও নরেন্দ্র মোদীর চমত্কার ব্যক্তিগত সম্পর্ক বর্তমান ভূ-কৌশলগত রাজনীতিকে প্রভাবিত করার মতো অবস্থানে চলে এসেছে। বিশেষ করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা, মধ্যপ্রাচ্যে সমীকরণ, অন্যায্য বাণিজ্য ও আরো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এই সম্পর্ক প্রভাব বিস্তার করতে পারে।-সূত্র ইত্তেফাক
মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল