কলমি চাষে ঝুঁকছে তিস্তাপাড়ের কৃষক

0

শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি

কলমি শাক। পথের ধারে অথবা ডোবা নালায় প্রাকৃতিকভাবেই জন্মাতো। কিছু দিন আগেও এই শাক ছিল গো-খাদ্য। কিন্তু এখন সেই চিত্র বদলেছে। পথের ধারের সেই কলমি শাকের কদর বাড়ছে। তবে গো-খাদ্যের জন্য নয়। এখন বাণিজ্যিক চাষে কলমি শাক মানুষের খাদ্য তালিকায় যোগ হয়েছে।

তাই লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তা পাড়ে কলমি শাকেই সংসারের চাকা ঘুরছে শত শত কৃষাণ-কৃষাণীর। এক সময় গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে ব্যবহার হতো যে কলমি শাকই অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হবে সেটা ভাবেনি কেউ আগে। এখন গরু-ছাগল দূরে থাক মানুষের শাকের জন্য চাহিদা পূরণ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এ জন্য কৃষাণ-কৃষাণীরা এখন মাঠের জমিতে পরিকল্পিত উপায়ে চাষ করছেন কলমি শাক।

বাজারে ভালো দাম থাকায় কলমি শাক চাষে আরো আগ্রহী হয়ে উঠেছেন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শত শত কৃষাণ-কৃষাণী। স্বল্প খরচ আর অধিক লাভের কারণে উপজেলায় এর চাষ দিন দিন বেড়েই চলেছে। খাল-বিলের ধারসহ আনাচে-কানাচে এমনিতেই বেড়ে ওঠা কলমি গাছকে স্থানীয় লোকজন এক সময় গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে গণ্য করলেও সেই কলমি গাছের কচি পাতাই এখন এ এলাকার কৃষকের আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আগে পরিত্যক্ত খাল-বিল, ডোবা-নালায় এমনিতেই জন্ম নিত এ কলমি শাক। এখন ভাতের সঙ্গে শাক হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় এর বিপুল কদর বেড়েছে হাট-বাজারে। এ কারণে কৃষক অধিক জমিতে পরিকল্পিতভাবে চাষ করছেন কলমি শাক। কলমি শাক বিক্রি করে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন।

দক্ষিণ তিস্তাপাড়ের গৃহিণী পারুল বেগম ও তার স্বামী হযরত আলী ১৫ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে কলমি চাষ শুরু করেছেন। তিনি এতে সফলতা পেয়েছেন। তার কলমির ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে- ক্ষেত যেন সবুজের চাদরে ঢাকা। কলমি চাষ সম্পর্কে পারুল বলেন, ‘আমি প্রথমে এলাকার মাঠে কলমি শাকের বীজ উৎপন্ন হতে দেখি। তাই আমি ভাবলাম লালতীরসহ বিভিন্ন বীজ কোম্পানী কলমি বীজ কেনে। চৈত্রের শেষে আমি ১৫কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে কলমি চাষ শুরু করি। বর্তমানে কলমি শাক বাজারে বিক্রি করে আমার ভালোই আয় হচ্ছে।’ পারুলের সফলতা দেখে এলাকার আরো কয়েকজন চাষী তাদের বেশ কিছু জমিতে কলমি চাষ করেছেন। তারাও সফল হয়েছেন কলমি চাষে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি  কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, পানি জমে থাকে না সেরকম জমিতে শাক চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে ডাঙ্গার দোআঁশ মাটিতে এ শাক ভালো হয়। ফাল্গুন থেকে শুরু করে আষাঢ়-শ্রাবণ পর্যন্ত কয়েক মাসব্যাপী কলমি শাক চাষ করা যায়। ৪ কেজি বীজে এক একর জমি চাষ করা যায়। জমি তৈরির সময় গোবর এবং অন্যান্য সার সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করে বীজ বপন করতে হয়। গাছ বড় হলে উপরের অংশ কেটে নিতে হয়। এরপর গাছের উপরের পাতার অংশ কেটে আঁটি বেঁধে হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়।

আমিনগঞ্জ গ্রামের কাশিম, মনিরুল, জামাল, বরকত আলীসহ বেশ কয়েকজন কলমি শাক চাষী বিভিন্ন বীজ কোম্পানীর সহযোগিতায় কলমি শাকের চাষ করেন। তারা শাকের জন্য চাষ করেন না। বীজের জন্য চাষ করেন।

কলমি বীজ চাষি লাবলু বলেন, ৮/১০ বছর ধরে বিএডিসি, লাল তীর, ব্র্যাক, মেটাল সীড, গ্যাটকো সীডসহ বিভিন্ন কোম্পানির সহযোগিতায় এলাকার বেশ কিছু চাষি কলমি শাক করে বীজ উৎপাদান করছেন। ওই বীজ ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা মণ দরে কোম্পানি কিনে নিয়েছে। বর্তমান বাজারে এ বীজের দাম কিছুটা কমে গেছে।

কলমি বীজ উৎপাদনের জন্য ভাদ্র মাসে ইরি-বোরো ধানের মত ক্ষেত তৈরি করে ৫/৬ ইঞ্চি লম্বা চারা জমিতে রোপন করতে হয়। এর আগে ধানের মত বীজতলা তৈরি করে নিতে হয়। কলমি ক্ষেতে সব সময় পানি থাকতে হয়। ৪ মাসের এ ফসলে ফুল থেকে বীজ তৈরি হলে ক্ষেত থেকে বীজ কেটে রৌদ্রে শুকাতে হয়। পরে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বীজ বিক্রি করা হয়।

তিনি আরো বলেন, এক একর জমির কলমির বীজ তৈরি করতে চাষ, সেচ, সার ও লেবার খরচ বাবদ প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ওই জমির উৎপাদিত বীজ গেল বার ৭৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে কলমী শাকের বীজ উৎপাদনকারী অনেক চাষী বললেন, বীজ তৈরির চেয়ে কলমী শাক চাষে খরচ কম এবং লাভ অনেক বেশি। বিধায় তাদের অনেকে সামনের মৌসুমে বীজ চাষের পরিবর্তে কলমি শাক আবাদ করবেন।

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানাগেছে, উপজেলায় এবার কলমিসহ নানান শাকসবজির চাষ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে।

মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.