কৃষকের ফসলি জমি দখল করে মানিকগঞ্জে চলছে পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরির কাজ

0

মুক্ত অনলাইন ডেস্ক

তিনফসলী জমিতে অবৈধ ড্রেজারের মাটি দিয়ে পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করছে স্পেক্ট্রা সোলার পার্ক। অভিযোগ রয়েছে বেশীরভাগ কৃষকের জায়গার দাম না দিয়ে দখল করে পাওয়ার প্ল্যান্টের কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা।মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় চলছে এই জবর দখল।

একারনে কৃষকরা একদিকে যেমন ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অপরদিকে তিন ফসলী জমি চাষ করতে না পারায় তাদের মধ্যে চাপাকান্না বিরাজ করছে।

এদিকে পাওয়ার প্ল্যান্টের পার্শ্ববর্তী পদ্মা নদী থেকে প্রসাশনের অনুমতি না নিয়ে অন্তত ১০টি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করে পাওয়ার প্ল্যান্টের জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। ফলে নদী ভাঙ্গনের আশংকা করছে গ্রামবাসীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার আরুয়া ইউনিয়নে বড়রিয়া মৌজায় কয়েকশত বিঘা আবাদী কৃষি জমি বালি ফেলে ভরাট করছে। এক হাজার বিঘার বেশী আবাদী কৃষি জমির চারপাশ দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে দখলে নেয়। এরপর থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আস্তে আস্তে দখলে নেওয়া হাজারও বিঘা আবাদী জমি ভরাট করছে। কিছু জমি ক্রয় করলেও অধিকাংশ জমির মালিকদের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক দখল করে নেয়।

সহজ-সরল দরিদ্র অনেক কৃষক ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। কেউ সাহস করে মুখ খুলতে চাইলে তাদের নানা হয়রানীসহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। এমনকি থানা পুলিশ দিয়ে কৃষক পরিবারের ছেলেদের কৌশলে আটক করার অভিযোগ রয়েছে। যে কারনে ভয়ে কেউ কিছুই বলতে সাহস পায় না।

উলাইল ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের নাজিমুদ্দিনের ছেলে ছালাম মুন্সি জানান, তার ৯০ শতাংশ জায়গা ছিল। স্পেক্ট্রা গ্রুপ তাকে নামমাত্র দাম দিয়ে তার জায়গা ভরাট করে ফেলেছে। তার এই জমিটি তিন ফসলী জমি ছিল। এই ফসল বিক্রি করে সে তার সংসার চালাতো।

একই এলাকার বাসিন্দা আন্জু মুন্সি ও মনজু মুন্সি। তাদের কয়েক বিঘা ফসলী জমি আছে। স্পেক্ট্রা গ্রুপ তাদের জায়গার দাম না নিয়ে তারা মাটি ভরাট করেছে। তারা জানায় এরকম ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক। প্রভাবশালীদের ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পায় না।

সকল আবাদী জমি ভরাট করে বিদেশী চায়না কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতি শতাংশ ভূমি প্রায় ২ লাখ টাকা দরে বিক্রি করে দেবে। নামে মাত্র ৬ থেকে ১১ হাজার টাকা দরে প্রতি শতাংশ ভূমি ক্রয় করলেও শতশত বিঘা ভূমি না কিনে জোরপূর্বক দখল নিয়ে ভরাট চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় শিল্পপতি মোঃ আফতাব উদ্দিন খান। এই শিল্পপতির স্থানীয় সকল কাজের দায়িত্বে রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আক্তারুজ্জামান খান মাসুম ও ইউপি কেরানী মোঃ মোবারক হোসেন পান্নু খান। তাদের রয়েছে স্থানীয় শক্তিশালী বাহিনী।

এ ব্যাপারে পাওয়ার প্ল্যান্ট কাজে দায়িত্বে থাকা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও স্পেক্ট্রা গ্রুপের কর্ণধার আফতাব উদ্দিনের চাচাতো ভাই মোঃ আক্তারুজ্জামান খান মাসুম জানান, আমরা ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৪১ একর জায়গা ক্রয় করেছি। তৎকালীন জেলা প্রসাশক রাশিদা ফেরদৌস আমাদের কৃষি জমিতে পাওয়ার প্ল্যান্টের অনুমোদন ও জায়গা ক্রয়ের অনুমোদন দিয়ে গেছেন। এছাড়া বর্তমান জেলা প্রসাশক এস এম ফেরদৌস ড্রেজার করার অনুমোদন দিয়েছেন। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।

জেলা প্রসাশক এস এম ফেরদৌস জানান, আমার আগের জেলা প্রসাশক কৃষি জমিতে পাওয়ার প্ল্যান্টের অনুমোদন ও জায়গা ক্রয়ের অনুমোদন দিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু ড্রেজারের কোনো অনুমোদন অামি দিইনি।

তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.