অনুরোধ নির্দেশ কোনটাই মানছেন না ঠিকাদার, রাতে চলছে সড়ক পাকাকরন
শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
পোড়ামাটি ইটের খোয়া। মাটি মিশ্রিত বালি। নিম্নমানের এসব উপকরন দিয়ে সড়ক নির্মাণ করতে ঠিকাদর বেঁছে নিয়েছেন রাতের অন্ধকার। এখন গ্রামিণ ওই সড়কটি পাকাকরণের কাজ চলছে রাতের অন্ধকারেই। স্থানীয়দের অনুরোধ আর সংশ্লিষ্ট এলজিইডি কার্যালয় থেকে ঠিকাদরকে সড়ক পাকাকরনে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার বন্ধে দেওয়া নির্দেশ কোনটিই মানছেন না প্রভাবশালী ঠিকাদার।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীখাতা (সোনামারি) থেকে খোদরপাড়া পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কটি পাকাকরণ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠেছে এমন অবিযোগ। কাজের সময় এলজিইডির প্রকৌশলীদের অনুপস্থিতি এমনকি ওইসব নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করার অভিযোগও রয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে লিয়াজু করেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে ব্যবহার অযোগ্য খোয়া অপসরাণ করতে ইতোমধ্যে দুটি চিঠি দিয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর।
এলজিইডি সূত্র মতে, প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি পাকাকরণ কাজের দরপত্র আহবান করা হয় গত বছরের ১৯ নভেম্বর মাসে। এর কার্যাদেশ দেওয়া হয় ওই বছরের ডিসেম্বরে। কাজটি পায় জেলার আদিতমারীর ঠিকাদার আব্দুল হাকিম।
তবে আব্দুল হাকিমের লাইসেন্সে কাজটি কালীগঞ্জের ইটভাটা ব্যবসায়ী আতোয়ার রহমাম ওরফে মাঝি করছেন বলে জানা গেছে। আতোয়ারের কাজ করার বিষয়টি স্বীকার করেছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের সাববেজ (নিচের স্তর) শেষ করে শুরু হয়েছে ডাব্লিউবিএম (দ্বিতীয় স্তর)। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি ডাব্লিউবিএম শেষ হয়েছে। তবে পুরো ডাব্লিউবিএম জন্য ব্যবহৃত খোয়া অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়া সড়কে রাবিশও ফেলতে দেখা গেছে। রাতেও চলছে কাজ। গত শনিবার রাতেও গিয়ে দেখা যায় সড়কের মাঝখানে স্তুপ করে ইটের গুড়া মিশ্রিত ব্যবহার অযোগ্য খোয়া রাখা হয়েছে।
স্থানীয় বাসীন্দা পবিত্র রায়, মলিন চন্দ্রসহ অন্তত দশজন ব্যক্তি অভিযোগ করেন, শুরু থেকেই দায়সারা ভাবে সড়কটির কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। উল্টো ‘সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার’ অভিযোগে এলাকাবাসীকে হুমকিও দিয়েছেন আতোয়ার রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ওই সড়কের পাশেই আতোয়ার রহমান মাঝির বিবিএমসি নামের ইটভাটা রয়েছে। মূলত তার ভাটায় থাকা গত মৌসুমের অবিকৃত খোয়া-রাবিশ দিয়েই তিনি সড়ক নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছেন। আর ভাটার সাথে সড়কটি হওয়ায় এতে তার সুবিধাও হয়েছে।
মাস দেড়েক আগে উপজেলার অারেকটি সড়ক পাকা করণকাজেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল আতোয়ারের বিরুদ্ধে। সেসময়ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ নিম্নমানের সামগ্রী অপসারণের জন্য চিঠি দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে।
সড়কটির কাজ ঠিকাদার আব্দুল হাকিম নিজে করছেন না দাবি করে বলেন, ‘আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে বাস্তবে কাজটি কে করছে তা আমি জানিনা’।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের সার্ভেয়ার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এমন কথা স্বীকার করে আইনুল হক বলেন, ‘ মূল ঠিকাদার আব্দুল হাকিমের লাইসেন্সে কাজটি করছে সাফ ঠিকাদার আতোয়ার মাঝি। পর পর দুটি ঠিঠি দেওয়া হলেও তা কোনো ভাবেই মানছেন না। নিম্নমানের কাজ করে যাচ্ছেন সাফ ঠিকাদার আতিয়ার রহমান মাঝি।
এ বিষয়ে কথা বলতে আতোয়ার রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ সময় ভাটাতে ইট পাওয়া যায় না। তবে ভালো ইটের খোয়া দিয়ে কাজ হচ্ছে। এলাকার কিছু লোক টাকা নেওয়ার জন্য অভিযোগ করছেন।
মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল