সরিয়ে নেওয়া হয়েছে জনসাধারণ, নরসিংদীতে নিলুফা ভিলায় অভিযান শুরু যে কোন সময়

0

মুক্ত অনলাইন ডেস্ক

আজ বুধবার যেকোন সময় নরসিংদীতে ‘নিলুফা’ ভিলায় অভিযান শুরু করবে পুলিশ। নরসিংদীর মাধবদীতে দুদিন ধরে ঘিরে রাখা জঙ্গি আস্তানা নিলুফা ভিলায় যে কোনো সময় অভিযান শুরু করতে পারে সোয়াট টিম।

বুধবার সকাল থেকে মাধবদী পৌরসভার ছোট গদাইরচরের সাততলা ওই ভবনের আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। আগের দিনের মতোই নিলুফা ভিলার ৫০০ মিটারের মধ্যে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা।

এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ বলে আশপাশের লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলা হয়েছে। আশপাশের কয়েকটি মার্কেটের দোকানপাট এবং ছয়টি ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। ভবনটির ভেতর মিফতাহুল জান্নাহ মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরও সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ওই আস্তানার দিকে এগিয়ে যেতে দেখা গেছে সোয়াট সদস্যদের। তবে চূড়ান্ত অভিযান কখন শুরু হবে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে।

পুলিশ জানিয়েছে, মাইকিং করে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হবে। তাতে সাড়া না পাওয়া গেলে অভিযান শুরু হবে।

আজ নরসিংদীর আরেকটি সাততলা বাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ। নরসিংদীর মাধবদীর ছোট গদাইরচর গাঙপাড় এলাকায় আফজাল হাজীর সাততলা বাড়ি ‘নিলুফা ভিলায়’ আজ বুধবার অভিযান চালাবে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিটিটিসি) ইউনিট। বুধবার সেখানে জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ না করলে ওই বাড়িটিতে অভিযান চালানো হবে জানায় সিটিটিসি ইউনিট।

সিটিটিসি ইউনিটপ্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, মাধবদীর গাঙপাড় এলাকার বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়েছে। তাদের আত্মসমর্পণ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। আত্মসমর্পণ না করলে আমরা দিনের আলোয় অ্যাকশনে যাব। গাঙপাড় এলাকার বাড়িটির মালিক আফজাল হাজী। ‘নিলুফা ভিলা’ নামে সাততলা ওই বাড়িটির সপ্তম তলায় একটি ফ্ল্যাটে দুই নারী ও এক পুরুষ জঙ্গি রয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

এর আগে চরভগীরথপুরের বাড়িটি সোমবার রাত থেকে ঘিরে রাখার পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অভিযান শুরু করে সিটিটিসির সোয়াট ও অন্যান্য বাহিনী। থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দের পর বিকাল ৪টার দিকে অভিযান শেষের ঘোষণা দেয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দুই লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়া হয়।

পুলিশ জানায়, ‘নিলুফা ভিলা’ নামে সাততলা বাড়ির তৃতীয় তলায় ‘মিফতাহুল জান্নাহ মহিলা মাদ্রাসা’ নামে একটি মাদ্রাসা আছে। সাততলায় জঙ্গিদের অবস্থান চিহ্নিত করে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, ‘নিলুফা ভিলা’র ওই ফ্ল্যাটটি ছয় মাস আগে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার বাসিন্দা হাফিজ ভূঁইয়া বাসা ভাড়া নেয়। সোমবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে গেলে বাসার ভেতর থেকে লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। এখানে কখন অভিযান চালানো হবে? জবাবে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছি। রাতভর চেষ্টা করব, যাতে তারা আত্মসমর্পণ করে। কারণ আমরা কোনো হতাহত দেখতে চাই না। যদি তারা আত্মসমর্পণ না করে, তা হলে দিনের আলোয় অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে।

অভিযান শেষে সিটিটিসি ইউনিটপ্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, বাড়িটিতে দুজনের লাশ পাওয়া গেছে। এদের একজন পুরুষ ও একজন নারী। তারা চারটি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে এখনও তল্লাশি চলছে। নিহত দুজনেরই বয়স ত্রিশের কোঠায় জানিয়ে পুলিশের এ ডিআইজি বলেন, তারা নব্য জেএমবির সদস্য।

প্রাথমিকভাবে তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পাওয়া যায়নি। পাঁচতলা বাড়ির পঞ্চম তলার ওই ফ্ল্যাটটি ৩ অক্টোবর ভাড়া নিয়েছিল তারা। ছোট গদাইরচর গাঙপাড় এলাকার জঙ্গিদের সঙ্গে এখানকার জঙ্গিদের যোগসাজশ রয়েছে। সন্দেহভাজন জঙ্গিরা পুলিশের গুলিতে নাকি নিজেরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারা গেছে- জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ভগীরথপুর চেয়ারম্যান মার্কেটের পাশের পঞ্চম তলা ওই বাড়ির মালিক বিল্লাল মিয়া। তিনি ডাইং ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। ইভা টেক্সটাইল মিল নামে তার একটি কারখানা রয়েছে। আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, দুর্গাপূজা ও সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জঙ্গিরা বড় ধরনের নাশকতার জন্য সংগঠিত হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নজরদারি বাড়িয়ে জঙ্গি আস্তানা দুটির সন্ধান পাওয়া যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাত ১০টার পর থেকেই পুলিশ বাড়ি দুটি ঘিরে রাখে। এলাকাবাসীর মধ্যে তখনই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সকাল ৬টার দিকে বাড়ি দুটির আশপাশ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। সরিয়ে নেয়া হয় বাসিন্দাদের। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। সকাল থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। তারা আত্মসমর্পণ করেনি। উল্টো তারা পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে, বোমা ছুড়ে মেরেছে।

মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.