পদ্মা সেতু বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা তুলে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়

0

মুক্ত অনলাইন ডেস্ক

একটি সেতু বদলে দিচ্ছে অনেক কিছু।  বিশ্ব অঙ্গনে একটি দেশের মর্যাদা তুলে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। শুধু তাই নয় দেশের যোগাযোগ খাতে এক যুগান্তকারী সাফল্যের স্মারক হয়েছে। এই সেতুটিই কিনা একটি অঞ্চল তথা একটি দেশের অর্থনিতিতে নতুন এক অধ্যয়ের জন্ম দিচ্ছে।

বাংলাদেশের এই পদ্মা সেতুটি এভাবেই বিশ্বের কাছে নানান সাফল্য গাঁথার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। শেখ হাসিনার একক প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ানে সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে। অথচ এই সেতু নির্মাণে দূর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্ব ব্যাংক ঋণ দেওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সেই পদ্মা সেতুকেই সরকার বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে- গত মহাজোট সরকারের মেয়াদ তিন বছর পার হওয়ার পর, ২০১১ সালের নভেম্বরে ‘সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়’ (তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়) এর দায়িত্ব দেওয়া হয় ওবায়দুল কাদেরকে। সেসময় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের দিকে অভিযোগের তীর ধেয়ে আসতে থাকে একদিকে মন্ত্রণালয়ের ইমেজ সংকট অন্যদিকে দু’বছর সময়। এমন এক কঠিন বাস্তবতায় দায়িত্ব নিয়ে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কতটা সফল হতে পারবেন তা নিয়ে নিজেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমি শেষ বেলার মন্ত্রী, একটু পরেই গোধূলি’।

অথচ সেই অনিশ্চয়তার ঘোর কেটে পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। পদ্মা সেতু নিয়ে তৈরি হওয়া ধোঁয়াশা কাটিয়ে সেই গোধূলি বেলার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হাত ধরে শুধু যে পদ্মা সেতুই নির্মাণ হচ্ছে তা নয়। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে।

এখন পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে পদ্মা সেতুর কাজ যথাসময়ে শেষ করার নির্দেশও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানাগেছে-  বর্তমানে মাওয়া ও জাজিরা অংশে মোট ৫টি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। মাওয়া অংশে ৬ নম্বর ও ৭ নম্বর পিলার এবং জাজিরা অংশে ৩৬, ৩৭ ও ৩৯ নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এছাড়া দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার আর ২১.১ মিটার প্রস্থের পদ্মাসেতুর মূল পিলার বসবে ৪২টি। সংযোগ সড়ক হবে ১২ কিলোমিটার।

তাছাড়া- মাওয়া অংশে ১.৫ কিলোমিটার ও জাজিরায় ১০.৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের সাথে থাকবে টোলপ্লাজা, পুলিশ স্টেশন, পাওয়ার প্লান্টসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। এ প্রকল্পে পরিবেশ ব্যবস্থাপনার আওতায় ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার ২শ’ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও তা দূর হয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সভায় পদ্মা সেতুতে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আরেক স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে- প্রকল্পটি ২০২২ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ সমাপ্ত করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পটি চারটি সেকশনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত আড়াই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করে ২০১৮ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দিন থেকে রেল চালুর পরিকল্পনা করছে সরকার।

নতুন রুটটি হবে ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া হয়ে মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে রেলওয়ের জন্য এটি সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এছাড়া যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশাপাশি পৃথক রেল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে বর্তমান সরকারের। এজন্য প্রাথমিক যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরই এই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

মুক্ত প্রভাত/রাশিদুল

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.