অকুতোভয়ী আহমদ ছফা

0

আহমদ ছফার (৩০ জুন ১৯৪৩ – ২৮ জুলাই ২০০১) জন্ম দিনে লিখতে গিয়ে তাঁর লেখার সাথে পরিচিত হবার কথা মনে পরে।

২০০৩ সালে ভিক্টোরিয়া পাবলিক লাইব্রেরিতে সদস্য হিসাবে প্রায় প্রতিদিন বিকাল ৫টা হতে রাত ৮টা থাকতাম। বই খুজতে গিয়ে আহমদ ছফার অনেক বই দেখতাম। ভাবতাম এ আবার কে? এতো গুলো বই তাঁর। অথচ আমি তাঁর নামই জানতাম না। যাক তখনই ছফার বই পড়ার সুযোগ হয়। খুব যে বেশি পড়েছি তা না; তবে তার লেখনি অন্যদের থেকে আলাদা ও শক্তশালী মনে হতো। কঠিন, বাস্তব, সত্যের সাবলিল প্রকাশ তার লেখনিতে।

আহমদ ছফার কিছু ঘটনা- ‘বাংলা-জার্মান সম্পীতি’র রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে ছফা বেগম জিয়াকে ফোন করেছিলেন। ফোনটি ধরেছিলেন তাঁর পিএস। ছফা বিনয়ের সঙ্গে পিএসকে বলেছিলেন, ম্যাডামকে কি একটু দেয়া যাবে? আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই। পিএস সাহেব জানতে চাইলেন, আপনি কে? ছফার জবাব, আমি আহমদ ছফা। পিএস সাহেব ফের জানতে চাইলেন, কোন আহমদ ছফা? পিএস-এর কথায় ছফা কচ ভয়ানক রকম খেপে গিয়েছিলেন। তিনি রাগলে সচরাচর যে গালটি তাঁর মুখ দিয়ে বের হত সেটি বেরিয়ে গিয়েছিল। তারপর তিনি কোন রকম ভূমিকা না করে বললেন, বাংলাদেশে আহমদ ছফা দু’জন আছে নাকি? ছফা কথা না বাড়িয়ে রিসিভারটি ধপাস করে রেখে দিয়েছিলেন। পিএস সাহেব ছফার এ অশোভন আচরণের কথা বেগম জিয়াকে জানিয়েছিলেন কিনা জানা যায়নি। কিছুক্ষণ পরে বেগম জিয়া ফোন করেছিলেন। ছফার কথার ঝাল তখনও থেকে গিয়েছিল। ফোন পেয়ে তিনি বেগম জিয়াকে বিরক্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ম্যাডাম, কী সব অশিক্ষিত পিএস টিএস রাখেন আহমদ ছফার নাম জানে না। ছফা র কথায় বেগম জিয়া হেসে জবাব দিয়েছিলেন, আমি নিজে অশিক্ষিত; শিক্ষিত মানুষ পাব কোথায়। আপনারা কেউ তো এগিয়ে আসছেন না? ‘বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি’ থেকে বাসায় লোকজন এলে বেগম জিয়ার সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টি সবিস্তারে বয়ান করেছিলেন। তিনি বেগম জিয়ার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে বারবার বলে যাচ্ছিলেন, ভদ্রমহিলার তারিফ না করে পারা যায় না। তিনি আশ্চর্য রকম বিনয়ী।”

“শেখ মুজিবর রহমান প্রথমে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, রাষ্ট্রদূত হওয়ার জন্য। কিন্ত তিনি যখন বললেন, শর্ত আছে। আমি (ছফা) বলেছিলাম, শর্ত ছফার জন্য নয়, আপনি অন্য কাউকে দেখুন। শেখ মুজিবর রহমান আমার উপর প্রচন্ড রুষ্ট হয়েছিলেন। কিন্ত জেলে দেয়ার সাহস পাননি। পরে শেখ মুজিবর রহমান আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা হওয়ার জন্য জন্য। আমি (ছফা): বলেছিলাম সম্ভব নয়। আমাকে ধারণ করার মতো শক্তি আপনার সরকার বা আপনার প্রশাসনের নেই। এরপর আবুল ফজলকে এই অফার দিলে তিনি আনন্দের সঙ্গে রাজি হন। আবুল ফজল শেখ সাহেবের কেনা গোলাম হয়ে যান। উপদেষ্টা হওয়ার পর শেখ সাহেবকে খুশী করা ছাড়া তাঁর আর কোন পথ অবশিষ্ট ছিল না।”

“বাংলা একাডেমীর একুশে বইমেলায় কলকাতার বই আসত। আহমদ ছফা এর বিরোধীতায় নামেন। তার বিরোধীতার ফলে কলকাতার বই আসা বন্ধ হয়। ছফা কাজটা করেছিলেন দেশের লেখকদের কল্যানের জন্য কিন্তু এদশেরই লেখক শওকত ওসমান তাকে বাজে লোক বলে মন্তব্য করেন। ছফা তাকে নিয়ে নিউমার্কেটের বইয়ের দোকানে দোকানে নিয়ে যান।গিয়ে জিজ্ঞেস করেন শওকত ওসমানের কোন বই আছে কিনা। কেউ লেখক কেই চিনতে পারল না।তখন কলকাতার একজন সাধারণ মানের লেখকের নাম বলতেই অনেকগুলো বই বের করে দিল। আহমদ ছফা তখন শওকত ওসমানকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘দেশটা আমরা বাল ছেঁড়ার জন্যে স্বাধীন করেছি?” সত্য বলার সৎ সাহসী আহমদ ছফাকে তাঁর জন্ম দিনে স্যালুট জানাই।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.