রুটির কারিগর থেকে কাজী নজরুল ইসলাম!

0

একজন রুটির কারিগর বাংলা সাহিত্যে যা সৃষ্টি করেছেন তা আজও এক মহা বিশ্ময়! বাংলা সাহিত্যে এতো ভাষার ব্যবহার আর কেউ করতে পারেনি। তিনি লেখার জন্য জেল খেটেছেন। জেলে ৩৯ দিন না খেয়ে অনশন করেন। তাঁর ৫টি বই নিষিদ্ধ হয়। যা বাংলা সাহিত্যে বিরল। তিনি চার হাজারের অধিক গান রচনা করে গেছেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতার জন্য কলম চালান। কাজী নজরুল একজন কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, ইমাম, সৈনিক, সাংবাদিক।

#কবিতা_ও_গানে_নজরুলঃ- “গাহি সাম্যের গান- যেখানে আসিয়া এক হ’য়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান, যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।”

#নিপীড়িত_মানুষ নিয়ে- “চাষা ব’লে কর ঘৃণা! দে’খো চাষা-রূপে লুকায়ে জনক বলরাম এলো কি না! যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারাও ধরিল হাল, তারাই আনিল অমর বাণী-যা আছে র’বে চিরকাল।”

#বিদ্রোহী_কবি- “আমি চির-বিদ্রোহী বীর- বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!” “ঊষার দুয়ারে হানি’ আঘাত আমরা আনিব রাঙা প্রভাত, আমরা টুটাব তিমির রাত, বাধার বিন্ধ্যাচল।”

#তরুণ_ছাত্র_যৌবনের_কবিতায়- “আমরা শক্তি আমরা বল আমরা ছাত্রদল। মোদের পায়ের তলায় মূর্ছে তুফান ঊর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল। আমরা ছাত্রদল।।” “যুগে যুগে ধরা ক’রেছে শাসন গর্বোদ্ধত যে যৌবন- মানেনি কখনো, আজো মানিবে না বৃদ্ধত্বের এই শাসন। আমরা সৃজিব নতুন জগৎ, আমরা গাহিব নতুন গান, সম্ভ্রমে নত এই ধরা নেবে অঞ্জলি পাতি’ মোদের দান! যুগে যুগে করা বৃদ্ধত্বের দিয়েছি কবর মোরা তরুণ- ওরা দিক্ গালি, মোরা হাসি’ খালি বলিব ‘ইন্না… রাজেউন!”

#ইসলামী_জাগরণের_কবি- “দিকে দিকে পঃন জ্বলিয়া উঠেছে, দ্বীন-ই-ইসলামী লাল মশাল, ওরে বে-খবর তুইও উঠ জেগে তুইও তোর প্রাণ-প্রদীপ জ্বাল।” “ভূবনজয়ী তোরা কি হায় সেই মুসলমান খোদার রাহে আনলে যারা দুনিয়া না-ফরমান। এশিয়া য়ুরোপ আফ্রিকাতে যাহাদের তাকবীর, হুঙ্কারিল উড়ল যাদের বিজয় নিশান।” “উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ; আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ। উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ, আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ।”

#পাপ- “অন্যের পাপ গনিবার আগে নিজেদের পাপ গোনো! পাপের পঙ্কে পুণ্য-পদ্ম, ফুলে ফুলে হেথা পাপ! সুন্দর এই ধরা-ভরা শুধু বঞ্চনা অভিশাপ।”

#নারী- “বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” সৈন্দয্যের  পুজারী নজরুল- “তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ? চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী, বলে না ত কিছু চাঁদ।”

#প্রেম_ভালবাসায়- “মোর প্রিয়া হবে, এস রাণী, দেব খোপায় তাঁরার ফুল। কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল।” “মোরা আর-জনমে হংস মিথুন ছিলাম নদীর চরে। যুগলরূপে এসেছি গো আবার মাটির ঘরে।।” ” নয়ন-ভরা জল গো তোমার আঁচল-ভরা ফুল। ফুল নেব না অশ্রু নেব, ভেবে হই আকুল।।” “আমায় নহে গো, ভালবাস শুধু ভালবাস মোর গান। বনের পাখীরে কে চিনে রাখে গান হ’ল অবসান।।”

#বিরহে- “শাওন-রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে। ভুলিও স্মৃতি মম নিশীথ স্বপ্ন সম, আঁচলে গাঁথা মাল ফেলিও পথ’ পরে।।” “মালা যখন গাঁথ তখন পাওয়ার সাধ যে জাগে, মোর বিরহে কাঁদ যখন আরো ভাল লাগে। পেয়ে তোমায় যদি হারাই দূরে দূরে থাকি গো তাই।” “ভুল করে’ কভূ আসিলে স্মরণে অমনি তা যেয়ো ভুলি’। যদি ভুল ক’রে কখনো এ মোর বাতায়ন যায় খুলি’, বন্ধ করিয়া দিও পুনঃ তায়’……. তোমার জাফরি-ফাকে খুঁজো না তাহারে গগন-আধাঁরে- মাটিতে পেলে না যাকে!”

#অভিমানী_কবি- “যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই কেন মনে রাখ তা’রে। ভুলে যাও তা’রে ভুলে যাও একেবারে।।” “তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না। কোলাহল করি’ সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না। -নিশ্চল নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধুপ।”

#শেষে- “বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি সেই দিন হবব শান্ত।” “বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে! দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে। রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা, তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা, বড় কথা বড় ভাব আসে না ক’ মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে! অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে!” কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় নজরুল চর্চা ও গবেষণায় আমাদের দৈন্যতা। নজরুল চর্চায় কেমন যেন অঘোষিত উপেক্ষা। আসুন আমরা কাজী নজরুলের সৃষ্টি নিয়ে বেশি বেশি চর্চা করি।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.