নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ভবানীগঞ্জ বাজারের ড্রেন নির্মাণে
উপজেলা হেডকোয়ার্টার ভবানীগঞ্জ বাজারের অসহনীয় দূর্ভোগ সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতার কারণে গোটা বাজার কাঁদা ও পানিতে একাকার হয়ে যায়। দূর্ভোগে পড়তে হয় স্কুলগামী ছত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী ও পথচারীসহ সকলের। হাটের দিন জলাবদ্ধতা ও যানজটের কারণে বাজারে আগত পথচারীদের যন্ত্রণার শেষ থাকে না। আজ এই দূর্ভোগ যন্ত্রণার অবসান ঘটাতে উদ্যোগ নিয়েছে ভবানীগঞ্জ পৌরসভা। পৌরসভার উদ্যোগে ভবানীগঞ্জ বাজারের ইসলামী ব্যাংক থেকে ভবানীগঞ্জ নিউমার্কেট পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার ফিট লম্বা দৈর্ঘের একটি ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগে নিয়েছে পৌরকর্তৃপক্ষ।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে ভবানীগঞ্জ বাজার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কোাটি টাকা ব্যয়ে ড্রেনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে চলতি মাসের শুরুতে । আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
ড্রেন নির্মাণ শেষ হাওয়ার সাথে সাথেই ভবানীগঞ্জ বাজারের অভ্যন্তরীণ রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু করা হবে বলে জানা গেছে।
পৌর সদর ও উপজেলা হেডকোয়াটর হিসাবে ভবানীগঞ্জ বাজারকে আধুনিক মানে গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এর নির্মাণ কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক ঠিকাদার ও বাজারের ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, এর আগে পৌরসভার তত্বাবধানে ভবনাীগঞ্জ কলেজ মোড় থেকে গোডাউন মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি নির্মাণের পর এক মাসও ঠিকেনি। পৌরসভার কাউন্সিলর নিজেই ঠিকাদার হয়ে নয় ছয় করে ওই রাস্তাটি নির্মাণ করায় বর্তমানে সেখানে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। তাদের মতে, ওই রাস্তার মত একই ভাবে বাজারের মধ্যের ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ করা হলে তা বছর না ঘুরতেই জলাবদ্ধতা নিরসনের পরিবর্তে ড্রেনগুলো ভেঙ্গে একাকার হয়ে আরো তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করবে বলে তারা আশংকা প্রকাশ করেন। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী আমিনুল, আব্দুর রাজ্জাক, নাজমুল হোসাইন সহ ১০/১২ জন ব্যবসায়ীরা বলেন, এত স্বল্পতম দৈর্ঘের ড্রেনের জন্য সরকারি বরাদ্দের কোটি টাকার যদি যথাযত ব্যয় করা হয় তবে উন্নত মানের ও টেকসই ড্রেন নির্মাণ করা সম্ভব। কিন্তু পৌরকর্তৃপক্ষ পূর্বের রাস্তার মত এবারও অতি নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। তারা পুরাতন মরচে ধরা রড় ও তিন নম্বর ইট দিয়ে ড্রেনের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার আবু তালেব জানান, আরসিসি ড্রেনে সরকারি ম্যানুয়ালে ৪ ইঞ্চি দূরত্বে রড থাকার নিয়ম থাকলেও এখানে ১০ ইঞ্চি দূরত্বে রড লাগানে হচ্ছে। এছাড়া ড্রেনে ব্যবহৃত ইট ও রডের মান নিয়েও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ড্রেন নির্মাণে নিযুক্ত শ্রমিক আকবর আলী জানান, রডের যে মাফ ঠিকাদার তাদের বলে দিয়েছেন তারা সেই মোতাবেক রড লাগাচ্ছেন। রডগুলো মরচে ধরা নি¤œমানের হওয়া বিষয়ে তারা জানান এগুলো ঠিকাদারের বিষয়। পৌরসভার সাবেক এক কাউন্সিলর জানান, এখানে ঠিকাদার বলতে তেমন কেউ নেই। মেয়র নিজেই ঠিকাদার হয়ে অন্যকে নামমাত্র ব্যবহার করে এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার মতে, মেয়র নিজেই ঠিকাদার হওয়ায় সরকারের ব্যয় সঠিক মাত্রায় হলেও কাজের গুনগত মান মোটেই ঠিক থাকছে না
অপর দিকে পৌরসভার এই ড্রেন নির্মাণ কাজের অত্যন্ত ধীর গতির কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাজারের বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ী ও পথচারীরা । এসব উন্নয়ন কাজের ধীর গতির কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। ড্রেন নির্মাণের জন্য রাস্তা খনন করায় অনেক দোকানে মালামাল লোডিং আনলোডিং করার কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। কৃষি ব্যংক মোড়ের মেসার্স নিপা হার্ডওয়ারের মালিক আমিনুল ইসলাম জানান, তার দোকানের সামনে ডেনের জন্য রাস্তা খনন করার ফলে সেখানে ট্রাক থেকে মালামাল উঠানামা করা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এই মোড়ের আরো ৪/৫ জন ব্যবসায়ীরা জানান, এর আগে ভবানীগঞ্জ নিউমার্কেট থেকে তরকারি হাটা পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণে ব্যবসায়ীদের দূর্ভোগের কথা। গত বছর ওই ড্রেন নির্মাণে মাসের পর মাস কালক্ষেপন করায় চরম দূর্ভোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া বর্ষ মৌসুমে ওই ড্রেন নির্মাণ করায় কাজের গুনগত মানও ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। ব্যবসয়ীদের মতে এবারও এই কোটি টাকার ড্রেন ঘুরে ফিরে আবার বর্ষা মৌসুমে এসে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে পৌরকর্তৃপক্ষ।
এসব বিষয়ে জানেত চাইলে পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী লিটন মিয়া কাজের ধীর গতির কথা স্বীকার করে জানান, নির্মাণ শ্রমিক সংকটের কারনেই কাজ এগানো যাচ্ছে না। এছাড়া অনিয়ম ও নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার বিষয়ে তিনি বলেন, ম্যানুয়াল ও কাজের ডিজাইন মোতাবেক আমরা কাজ করছি। এবং কাজের ধীর গতির বিষয়ে তিনি বলেন আমরা বসে নেই । ব্ইার থেকে হলেও নির্মাণ শ্রমিক এনে কাজটি যথাসময়ে (বর্ষার আগে) শেষে করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু এই ড্রেনটি পৌরসভার অন্যান্য কাজের মান খুবই নিম্মমানের হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকৌশলী লিটন মিয়া উত্তেজিত হয়ে বলেন, এখানে(বাজারে) অনেক সাংবাদিক রয়েছে । আপনি এত খোঁচাখুঁচি করেন কেন ? এই বলে মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন।
এ বিষয়ে কাজের মূল ঠিকাদার ভবানীগঞ্জ বাজারের মেসার্স জাহাঙ্গীর ট্রেডার্সের মালিক জাহাঙ্গীর আলম হেলাল কাজের মান অত্যন্ত এবং নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের কথা স্বীকার করে বলেন, ওখানে আমার নাম ব্যবহার করে ওরা এনামুল, ওছির সহ কয়েকজন মিলে কাজটি করছে। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য নেওয়ায় সমীচিন মনে করছি। এ বিষয়ে সাব ঠিকাদার এনামুল হক বলেন, ডিজাইনে ৫ ইঞ্চি দূরত্বে রড দেওয়ার কথা বলা আছে । আমরা সেই মোতাবেক রড দিচ্ছি। তবে রড গুলো অনেক আগে কিনে রাখায় সেখানে কিছু মরচে দাগ পড়তে পারে। তবে ইটের মান নিম্ম হওয়ার বিষয়ে স্বীকার করে তিনি বলেন, কিছু ইট মানে খারাপ হয়ে থাকতে পারে তবে আমরা সেগুলো পরিবর্তন করে দিব। এছাড়া ড্রেনটি নির্মাণে দোকানপাট সহ কিছু স্থাপনার প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়ে বলেন, এসব কারণে নির্মাণ কাজ এগোতে বিলম্ব হচ্ছে।
এ সব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেক জানান, ড্রেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কাজ সরকারি ম্যানুয়াল অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। কোথাও কোন অনিয়ম হলে বা এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আগামীতে রাস্তা, পৌরভবন, লাইটিং সহ পৌসভার আরো উন্নয়ন কাজ হবে বলে তিনি জানান।